বাংলাদেশের মানচিত্রের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। জেলায় এ বছর আবহাওয়া অনুকুল থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সাথে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ভরা মৌসুমে মরিচের ভালো দাম পেয়ে কৃষক বদলে ফেলেছে নিজেদের ভাগ্যের চাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, এ বছর জেলায় ১১ শ ৫২ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। চাষকৃত মরিচের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় জাতের জিরা, মল্লিকা, বায়ান্ন সহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের মরিচ।
আরও পড়ুন- ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ডি শ্যুটার
সরেজমিনে জেলার বেশকিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সূর্যের প্রচন্ড তাপের মাঝেও হাতের আলতো ছোঁয়ায় মরিচ তুলছে বিভিন্ন বয়সী নারী, পুরুষ সহ শিশুরা। অনেকে আবার ক্ষেতের পাশে মরিচ শুকাতে দিচ্ছেন, কেউ ক্ষেতে সেচ ও সার দিচ্ছেন, কেউ আবার পোকা দমনে কীটনাশক স্প্রে করছেন।
মধুপুরের আনু, লতা, ঘুরণগাছের জেসমিন, আলে, কাশলগাঁওয়ের রবিউল সহ অনেকে জানান, মরিচের মৌসুমে প্রতিকেজি ৮/৯ টাকা দরে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মরিচ তুলতেছি। এতে আমাদের দৈনিক ৩৫০/৪০০ শত টাকা আয় হচ্ছে। এতে করে আমাদের সংসার ভালোই চলছে।
মরিচ চাষি সাহিরুল, আনোয়ার, সালাম, জাহাঙ্গীর ও রফিজ উদ্দিন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ঝড় বৃষ্টি কম। তাই মরিচের ফলনও ভালো।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
সাহিরুল বলেন, আমি অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ১৬৬ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষাবাদ করেছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা শুকনো মরিচ বিক্রি করেছি। আশা করি আবহাওয়া ঠিক থাকলে সর্বসাকুলে সাড়ে ৪ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকার মরিচ বিক্রি হবে। কেননা গত বছরের তুলনায় এবার শুকনো ও কাঁচা মরিচের দাম বেশি। সেই সাথে আবহাওয়া ভাল থাকায় খুব অল্প সময়ে মরিচ শুকিয়ে ঘরে নেওয়া যাচ্ছে। এবার যেহেতু মরিচের দাম ও চাহিদা বেশি, তাই সূর্যের তীব্র তাপের মাঝেও আনন্দের সাথে মরিচ তুলতেছি।
মরিচ ক্রেতা জাহাঙ্গীর ও মজিবর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলায় মরিচ তুলনামূলক চাষাবাদ কম হয়েছে। সে সব এলাকায় মরিচের চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে কাঁচামরিচ ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা মণ আর শুকনো মরিচ জাত ও শ্রেণী ভেদে সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা পররতি মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’, আঘাত হানতে পারে ১২ মে
সদর উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ কৃষ্ণচন্দ্র রায় বলেন, অন্যান্য বছরে তুলনা চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সদর উপজেলায় ৬৯০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষাবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে মরিচ চাষে রোগ বালাই ও পোকার আক্রমণ অনেক কম দেখা গেছে। যার ফলন নির্ধারণ করা হয়েছে ২.৪০ মে.টন/হেক্টর।
তিনি আরও জানান, আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বক্ষণিক মাঠ পর্যায়ে আমরা কৃষকের মাঝে পরামর্শ দিয়ে আসছি। এতে স্বল্প খরচে কৃষক মরিচে ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছে।