ডাক্তারের পদ ১৯টি, তার মধ্যে দুই চিকিৎসক ছুটি না নিয়েই (যুক্তরাষ্ট্রে), ৫ জন ডাক্তার সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে। কিন্তু তারা বেতন তুলছেন রায়পুর থেকে। সম্প্রতি ৭ জন ডাক্তার চলে গেছেন। এসব সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে হাসপাতাল ডাক্তার ও নার্সের চরম সংকটে দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন ৫-৬ শত রোগীকে।
অভিযোগ উঠেছে, ডাক্তাররা অনেকেই শহরের বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিজিটের মাধ্যমে রোগী দেখে থাকেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রর ভবন আছে, বরাদ্দ আছে, কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামও থাকলেও; কিন্তু চিকিৎসা নেই। দুই চিকিৎসক অনুমতি না নিয়েই আট বছরে ধরে অনুপস্থিত। তাঁরা কোথায় আছেন, কী করছেন তাও নিশ্চিতভাবে জানে না জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই হাসপাতালে ১৯জনের মধ্যে ৫ ডাক্তার এখন রয়েছেন। নিয়োগপ্রাপ্ত-ডাক্তার জাহিদ হোসেন (জুনিয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ), শারমিন সোহরাব, শোয়েব হোসেন ও রুমা আক্তার (মেডিকেল অফিসার)।
গাইনি, শিশু ও মেডিসিন ছাড়া কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাই। ৩৬ জন নার্সের মধ্যে ১০ জনই নাই।
মঙ্গলবার কানের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন হনুফা বেগম (৫৫)। ১০টার দিকে টিকিট কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারেন নাক-কান-গলার কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। অন্য কোনো চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দেন টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক। পরে ওই রোগী ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর হাসপাতালে ছুটে যান। দুপুর ১২টায় রাখালিয়া গ্রাম থেকে ধনু মিয়া (৭০).নামের বৃদ্ধ স্ট্রোক করে হাসপাতালে ছুটে আসেন। হাসপাতালেই তিনি মারা যাওয়ায় কান্নাকাটি করে লাশ নিয়ে বাড়ীতে চলে যায় স্বজনরা। হনুফা বেগমের (৪২) নামের বামনী গ্রামের আরেক নারী জানালেন, জরায়ু সমস্যার জন্য চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন তিনি। এই সমস্যার নাকি কোনো ডাক্তার হাসপাতালে নেই। চিকিৎসক সংকটের কারণে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বহির্বিভাগে আসা রোগীদের। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত (২৮ মার্চ/২০২৩) হাসপাতালে অবস্থানকালে এ তথ্য জানা গেছে।
উপকূল অঞ্চল লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-জেলা সদর) আসনে প্রায় ৪ লাখ লোকের বসবাস। এ অঞ্চলের বাসিন্দারা চিকিৎসা সেবার জন্য ১০০ শয্যার জন্যে আবেদন করলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও তা অনুমোদন হয়নি। সামান্য রোগেও সরকারী চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল। নির্ভর করতে হয় প্রাইভেট চিকিৎসার উপর। উন্নত চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় জেলা সদর অভিমুখে নয়তো রাজধানীতে।
পরিসংখ্যান বিভাগ জানান, লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুরে (প্রথম শ্রেণীর পৌরসভাসহ ১০টি এবং সদরে ৭টি ইউনিয়ন) জনসংখ্যা ৪ লাখের উপরে। তবে স্থানীয়দের মতে মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চলের ভাসমান জনসংখ্যাই রয়েছে প্রায় ২০ হাজার।
জানা গেছে, অর্থোপ্যাডিক সার্জন, চক্ষু ও ইএনটি, কার্ডিওলজি, চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞের পদ শূন্য। প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগী চলে যায়। দ্বিতীয় শ্রেণির ২৪টি পদের মধ্যে পাঁচটি, তৃতীয় শ্রেণির ৪৩টি, চতুর্থ শ্রেণির ২৭টির মধ্যে ১৫টি শূন্য রয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সূত্র জানায়, যেখানে কোন চিকিৎসা কেন্দ্র নেই সেসব স্থানের ডাক্তারদের শহরের ৩০০শয্যা ও ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ডিপুটেশনে রাখা হয়। তবে রায়পুর হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৩০০শয্যা ও ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে কোন শূন্য সামান্য। পর্যাপ্ত লোকবল আছে। এখানে ডিপুটেশনে দেখিয়ে প্রতিমাসে নিয়োগপ্রাপ্ত ৫ ডাক্তার বেতন তুলেন।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বাহারুল আলম জানান, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে প্রতিনিদি ৫-৬’শ রোগীর চিকিৎসা নিতে আসেন। এহাসপাতালে ডাক্তার কথা ১৯ জন। গত বছর মন্ত্রনালয় থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত ৬ জন চলে গেছে। ৫ জন সদর হাসপাতে ডিপুটেশনে। চলতি মাসে দুইজন মাতৃত্বকালিন ছুটি যাবে। ডাক্তার না থাকায় বেশি রোগী নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর-সিভিল সার্জন আহাম্মের কবির বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। দ্রুত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-সদর একাংশ) এমপি এডঃ নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, আমাকে তো জানায়নি। বিষয়টি সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলে জানানো হবে।