সুমা আক্তারের স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। এজন্য সে ভর্তি হয় লক্ষ্মীপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে। এ বছর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইলেক্ট্রিক্যাল ট্রেড থেকে এসএসসি-তে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের আবিরনগর গ্রামের ইসমাইল ব্যাপারী বাড়ির নির্মাণশ্রমিক নূরউদ্দিনের মেয়ে সুমা। নূরউদ্দিনের এক মেয়ে ও এক ছেলে। সুমা বড়। তার ভাই ইয়াছিন একই প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। কষ্ট করে তাদের চলতে হয়। বাবার আয়ে তাদের সংসার চালানো কঠিন। ভাই-বোনের স্বপ্ন একদিন তারা সত্যিকারের মানুষ হয়ে সংসার ও সমাজকে আলোকিত করবে। তবে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার শ্রমিক বাবার আর্থিক অসচ্ছলতা।
সুমার মা শাহিনুর বেগম (শানু) বলেন, সুমার বাবা ছোটবেলা থেকে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করে আসছে। আমাদের বিয়ের পর থেকে দুঃখ-কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি। ছোট্ট সংসার। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমাদের পরিবার। তার বাবার সামান্য আয় দিয়ে তাদের ভাই-বোনের পড়ালেখা ও সংসার চলে। মাঝে-মধ্যে খুব হিমশিম খেতে হয়। কিছুই করার থাকে না তখন। তবুও ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা বন্ধ করিনি।
সুমার বাবার লেখাপড়া নেই। আমি বানান করে কোনোরকম বাংলা পড়তে পারি। সুমা জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমরা অনেক খুশি। ছোটকাল থেকে সুমাকে পড়ালেখার পাশাপাশি সংসারের কাজকর্ম সবকিছু আমার সঙ্গে করতে হয়। সুমার স্বপ্ন ইন্জিনিয়ারিং পড়ার। মা হিসাবে আল্লাহ কাছে আমার এখন এটাই চাওয়া যেন সুমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।
খুশি সুমার বাবা নূরউদ্দিনও। তিনি বলেন, মেয়েকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সীমিত আয়ে সংসার চালানো কঠিন।
সুমা বলে, বড়লোকের ছেলে-মেয়েরা ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। এবং তারা প্রতিটি বিষয় প্রাইভেট পড়তে পারে। আমাদের ভাগ্যে তা হয় না। একমাত্র অর্থের কারণে। তবুও খুব কষ্ট করে ৩ থেকে ৪ মাস প্রাইভেট পড়তে হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার রহমত। মা-বার দোয়া। শিক্ষকদের সঠিক পরামর্শ। নিজের চেষ্টায় একটি ভালো রেজাল্ট করতে পারলাম। আমার স্বপ্ন ইন্জিনিয়ারিং পড়ার। আল্লাহ যেন আমার এ স্বপ্নটা পূরণ করে।
সে আরও বলে, আমার সঙ্গের সহপাঠীরা মোবাইল, ফেইসবুক, ইমু, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে। আমি পড়ার টেবিল বই-খাতা, কলমকে সঙ্গী করলাম। আজ আমি এজন্য সাফল্য অর্জন করলাম। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষার শেষে মার কাছ থেকে সেলাই মেশিন শিখলাম। এখন নিজের জামাকাপড় নিজেই সেলাই করি।