পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে নদী ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টার মধ্য দিয়েই কয়েক দফা বন্যার পর তিস্তা নদী তার চির চেনা রুপ নিয়ে ভাঙ্গন অব্যহত রেখেছে। বন্যার পানি বসতবাড়ী হতে নেমে গেলেও নদীর উপরে যেন দায়িত্ব দিয়ে গেছে পাড় ভাঙ্গনের। আর এজন্য বিঘার পর বিঘা জমি ও বসতভিটা খেয়ে এগোচ্ছে তিস্তা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। হুমকির মুখে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ বাগডোরা, আদিতমারী উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি ও হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না গড্ডিমারি এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। এছাড়া তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকার কমপক্ষে ২০টি পয়েন্ট হুমকির মুখে পড়েছে। এসব জায়গায় বসতভিটা, ফসলি জমি, গাছপালা ও বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
আরও পড়ুন- কিশোরগঞ্জে দরবার শরীফ থেকে ফেরার পথে বাস খাদে, আহত ২০
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা চন্ডিমারীর বাসিন্দা খয়বর হোসেন বলেন, ‘তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় আবার নদী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছি। সরকার থেকে জিও ব্যাগ ফেললেও কাজে আসছে না।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরা গ্রামের মরিয়ম নেছা (৫০) কান্নাবিজরিত কণ্ঠে বলেন, ‘হামাক (আমাদেরকে) তিস্তার ভাঙন থাকি বাঁচান। ঘরদুয়ার (বসতঘর) নদীতে চলি গেইছে। এই নদী হামাক (আমাদেরকে) শ্যাষ করি দিছে (নিঃস্ব করে দিয়েছে)।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা গ্রামের ভাঙনকবলিত কৃষক আফছার আলী বলেন, ‘তিস্তার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। প্রতিদিন নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে বসতভিটা ও আবাদি জমি। নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছেন। অনেকে রাস্তার পাশে ঘর ফেলে রেখেছেন।’
একই এলাকার গফুর মিয়া বলেন, ‘ভাঙতে ভাঙতে মোর (আমার) বাড়িটাও ভাঙিয়ে গেল। তিনদিন ধরে (হতে) ঘুম নাই, খাওয়া নাই। পরিবার নিয়ে কডে যামু (কোথায় যাবো) কোনো দিশা পাই না।’
আরও পড়ুন- মালয়েশিয়ায় বিমান বিধ্বস্তে নিহত অন্তত ১০
খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান মন্ডল বাদল বলেন, ‘উজান থেকে পানির সঙ্গে বালু এসে মূল নদী বন্ধ হয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। ফলে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙনকবলিত অনেক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ‘গত বছর ইউনিয়নের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে ভাঙন দেখা দিলে গৃহহীন হয়ে পড়েন অনেকে। এ বছরে হুমকির মুখে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক ও চর সিন্দুর্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।’
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর এখন কমতে শুরু করছে। এতে করে লালমনিরহাট সদর উপজেলা ও আদিতমারী উপজেলার কয়েকটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ভাঙন। তবে ভাঙন ঠেকাতে আপদকালীন কাজ হিসেবে বিভিন্ন পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।’