দেশে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে মহাভারত অশুদ্ধ না হলেও সংবিধান অশুদ্ধ হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কিছু খুব জ্ঞানী-বিজ্ঞানী লোক আছেন। তাদের কাছে শুনলাম, ‘দুই-চার বছরের জন্য যদি একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে, তাহলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না’। আপনারা বুঝতে পারেন কারা এসব কথা বলতে পারেন। ২০০৭-২০০৮ সালে তো অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন কার কী লাভ হয়েছিল? তখন কিছু এ গাছের ছাল আর ও গাছের বাকল নিয়ে একটা দল গঠনের চেষ্টা, এ দল থেকে ও দল থেকে কিছু লোক ভিড়িয়ে দল গড়ার চেষ্টা হয়েছে। আমরা রাজনীতিবিদরা তো সব খারাপ। আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে ঢুকানো হলো। আর কিছু কিছু সুযোগ সন্ধানী তখন মাথা তুলে দাঁড়াল এবং তখন তারা কেউ কিংস পার্টি করে, কেউ এই পার্টি, সেই পার্টি করে…..। এই অবস্থায় মহাভারত অশুদ্ধ হবে না, এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের সংবিধান অশুদ্ধ হবে।
আরও পড়ুন- ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস নিয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা
শেখ হাসিনা বলেন, যখন থেকে বইমেলা শুরু তখন থেকেই মেলায় আসতাম। সকাল থেকে সারাদিন এখানে ঘুরঘুর করতাম। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পায়ে শিকল পড়ে যায়; নিয়মের মধ্যে আসতে হয়, আবার চলে যেতে হয়; আগের মতো সেই স্বাধীনতাটা পাচ্ছি না; সেটা আর উপভোগ করতে পারি না।
তিনি বলেন, এ বটতলায় অনেক সময় কাটিয়েছি আমরা। কোভিডের কারণে দুই বছর সরাসরি মেলায় আসতে পারিনি। আজকে দীর্ঘদিন পর আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। যদিও আগের মতো সেই স্বাধীনতা পাচ্ছি না। তারপরও বাংলা একাডেমিতে আসতে পারলাম, এটাই হচ্ছে সব চাইতে বড় পাওয়া। এই প্রাঙ্গণে আমার সবসময় পদচারণা ছিল। আমি সবসময় বাংলা একাডেমির লাইব্রেরি ব্যবহার করতাম।
আরও পড়ুন- নির্বাচনঃ হেরে গেলেন হিরো আলম
সরকারপ্রধান বলেন, পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের ওপর উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, এর প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালে ২ মার্চ সলিমউল্লাহ মুসলিম হলে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। একটা বিজাতীয় ভাষা, আবার সেটাকে যখন প্রতিবাদ করা হলো তখন বাংলা ভাষাকে আরবি বা উর্দু হরফে লেখার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হলো। সেই অধ্যায় আমাদের দেখতে হয়েছে। আবার পরবর্তীকালে বলা হলো ল্যাটিন হরফে লিখতে হবে। বাঙালি কোনোটাই মানেনি। আমরা সেটা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, সেটা নিয়ে এগিয়ে যাব।
তিনি বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা, আর স্বাধীনতার নয় মাসে আমাদের জাতির পিতা সংবিধান দিয়েছেন। অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে সেই সংবিধান শুধু অশুদ্ধ হবে না, বাংলাদেশের জনগণের জীবনমানও অশুদ্ধ হবে। কারণ ওই দুই বছরে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, সাহিত্যচর্চাসহ সবকিছু বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল।
বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর, পুস্তক প্রকাশক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান ছোটন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ নূরুল হুদা প্রমুখ। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও ভাষাপ্রেমী-বইপ্রেমীরা উপস্থিত ছিলেন।