লক্ষ্যটা মোটেই সহজ ছিল না। ভারতের বিপক্ষে জয় পেতে বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হতো ১৮৪ রান। এই রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা হয় স্বপ্নের মতো। কিন্তু এই স্বপ্নের মাঝে বাগড়া দেয় বৃষ্টি। যাতে লক্ষ্য কমে ১৬ ওভারে দাঁড়ায় ১৫১। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিতে গিয়ে লড়াই জমিয়েও রাখতে পারল না বাংলাদেশ। বৃষ্টি আর ভারতের কাছে শেষ পর্যন্ত হতাশায় ডুবল বাংলাদেশ।সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ডার্কওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ৫ রানে হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল।
আজ বুধবার (২ নভেম্বর) বিশ্বকাপে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ রানে হারিয়েছে ভারত। এই জয়ে সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে গেল রোহিত শর্মার দল। অন্যদিকে সেমির লড়াই থেকে অনেকটাই ফিকে হয়ে গেল বাংলাদেশের আশা।
আরও পড়ুন- টি-২০ বিশ্বকাপঃ সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশের দরকার ১৮৫
ব্যাট করতে নেমে প্রথম তিন ওভারে আঁটসাঁট বোলিংয়ে ভারত সুবিধা করতে পারেনি, তারা করে মাত্র ১১ রান। তবে রোহিত শর্মার উইকেট হারানোর পর থেকে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলি। পাওয়ার প্লে শেষ করে তারা ১ উইকেটে ৩৮ রানে। আর প্রথম ৮ ওভারে ভারত করে ৫২ রান। এরপরই বাংলাদেশের বোলারদের উপর ছড়ি চালায় ভারতের ব্যাটাররা।
অধিনায়ক রোহিত শর্মা ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও লোকেশ রাহুল আর বিরাট কোহলি তুলে নেন অর্ধশতক। নির্ধারিত ২০ ওভারে উইকেট ৬ হারিয়ে রান ১৮৪ করে ভারত। জয়ের জন্য বাংলাদেশকে করতে হতো ১৮৫ রান। কিন্তু বৃষ্টি আইনে পরবর্তীতে সেই লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫১ রানে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ করে ১৪৫ রান। ৫ রানের জয় পায় ভারত। এই জয়ে সেমিফাইনালের পথে কার্যত এক পা দিয়ে রাখলো রোহিত বাহিনী।
অ্যাডিলেড ওভালে রান তাড়ায় লিটন দাসের ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশের ঝোড়ো শুরু হয়। মাত্র ২১ বলে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। তাঁর ব্যাটে চড়েই স্বপ্ন জয়ের পথে হাঁটছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি। বেরসিক বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ।
আরও পড়ুন- জমিদার নামের ষাড়ের ওজন এক হাজার ৮০ কেজি-দ্বিগুণ লাভের আশা
বৃষ্টির আগে ৭ ওভারে বাংলাদেশের রান বিনা উইকেটে ছিল ৬৬। কিন্তু বৃষ্টির পর মাঠে নেমেই লিটনকে হারায় বাংলাদেশ। রান আউটে কাটা পড়েন লিটন। ফেরার আগে করেন ২৭ বলে ৬০ রান।
লিটন ফেরার পর শুরু হয় বাংলাদেশের হতাশা। একে একে উইকেট বিলিয়ে দেন সাকিব, আফিফ, ইয়াসির, মোসাদ্দেক। ব্যাটারদের হতাশায় বাংলাদেশও পারেনি লক্ষ্যে পৌঁছাতে।
ওভালে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় বাংলাদেশ। আগে ফিল্ডিংয়ে নেমে প্রথম ওভারটা দারুণ কাটে বাংলাদেশের। প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দেন তাসকিন। কিন্তু পরের ওভারে সেই রিদম ধরে রাখতে পারেননি শরিফুল। এক ছক্কা খেয়ে তিনি দেন ৯ রান।
তৃতীয় ওভারে ফের আসেন তাসকিন। বল হাতে এসেই রোহিতকে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন। ওভারের চতুর্থ বলে সহজ ক্যাচ তুলে দেন ভারতীয় অধিনায়ক। কিন্তু সেই ক্যাচ মিস করে দলকে ডোবান হাসান মাহমুদ।
আরও পড়ুন- কলাপাড়ায় জাতীয় যুব দিবস পালিত
অবশ্য সেই হতাশা বেশিদূর যায়নি। পরের ওভারে হাসান বল হাতে প্রতিদান দেন। নিজের প্রথম ওভারে এসেই তুলে নেন রোহিতের উইকেট। তরুণ পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আপার কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত। সেখানে থাকা ফিল্ডার ইয়াসির আলি ভুল করেননি মুঠোয় জমাতে। ৮ বলে দুই রান করেন ভারতীয় তারকা।
শুরুর চাপ কাটিয়ে জুটি গড়ে তোলেন কোহলি ও রাহুল। দ্বিতীয় জুটিতে স্কোরবোর্ডে ৬৭ রান তোলে ভারত। দশম ওভারে সাকিব এসে ভাঙেন এই জুটি। ফিরিয়ে দেন হাফসেঞ্চুরি করা রাহুলকে। ৩২ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় সাজানো ছিল তাঁর ইনিংস।
আরও পড়ুন- হিলিতে নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য ফেন্সিডিল সহ আটক -২
রাহুলকে হারানোর পরও কমেনি ভারতের রানের গতি। কারণ উইকেটে থিতু হয়ে যায় কোহলি-যাদবের জুটি। এই জুটিতে ৩৮ রান করেন তিনি। জমে ওঠা এই জুটিও ভাঙেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়কের বলে জায়গা করে মারতে চেয়েছিলেন যাদব। কিন্তু সাকিব বল স্লো করে দেন। তখন বল গিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে। ৪ বাউন্ডারিতে ১৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস উপহার দেন যাদব।
এরপর পান্ডিয়াকে টিকতে দেননি হাসান মাহমুদ। ৬ রানে বিদায় করেন ভারতীয় অলরাউন্ডারকে। তবে থিতু হয়ে যান কোহলি। ৩৭ বলে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। তাঁর ব্যাটে চড়েই লড়াইয়ের পুঁজি পায় ভারত। মাঝে কার্তিক ৭ রান। শেষ দিকে শরিফুলকে তুলোধুনো করে বড় পুঁজি পেয়ে যায় ভারত।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৩৩ রানে দুই উইকেট নেন সাকিব। হাসান মাহমুদ নেন তিনটি। সবচেয়ে খরুচে বোলিং করেন শরিফুল। তিনি ৪ ওভারে দেন ৫৭ রান।