গতি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। ঘূর্ণিঝড় মোখা ক্রমশ বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে অতি প্রবল বেগে। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
শনিবার (১৩ মে) ঘূর্ণিঝড়ের লাইভ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট জুম ডট আর্থ এবং উইন্ডি ডট কম এ তথ্য জানিয়েছে।
উইন্ডি ডট কমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা সুপার সাইক্লোনে রূপ নেয়। এই মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন- সোমবারের ৬ বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়, বাতাসের গতিবেগ ১১৮ থেকে ২২০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে তাকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের বেশি হলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়।
এদিকে জুম ডট আর্থের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূল থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ১৬ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানাচ্ছে, শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল মোখা।
আরও পড়ুন- যে দেশ স্যাংশন দেবে তাদের থেকে কিছুই কিনব নাঃ প্রধানমন্ত্রী
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মোখার গতি শুক্রবার পর্যন্ত আট কিলোমিটারের মতো ছিল। কিন্তু আজ থেকে এর গতি বেড়ে গেছে। এখন এটি প্রায় ২০ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় থাকা মোখা উত্তর-উত্তরপূর দিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হয়ে ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার বেগে এগিয়ে আসছে। আর গতি বেড়ে যাওয়ার কারণে আজ মধ্যরাতেই চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় এর অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
এদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল শনিবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে ঝড়ের পূর্বাভাস নিয়ে জানিয়েছেন, রাত ৩টা থেকে ভোর ছয়টার মধ্যে মোখার অগ্রগতি অংশ সেইন্টমার্টিন দ্বীপে আঘাত হানতে যাচ্ছে। এসময় ঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে ১৯০ থেকে ২১০ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে স্পষ্টত চোখ সৃষ্টি হয়েছে ও প্রচণ্ড ঘূর্ণণ সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে।
জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত রিয়েল টাইম চিত্র ও আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার হতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্নেষণ করে এই পূর্বাভাস তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হেনেছিল সুপার সাইক্লোন সিডর। আঘাতের সময় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। তবে এ সময় দমকা হাওয়ার বেগ উঠছিল ঘণ্টায় ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। সিডরের প্রভাবে উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছিল।