‘আওয়ামী লীগ পালানোর পথও খুঁজে পাবে না’, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এমন বক্তব্যের জের ধরে এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পলাতক আসামির মুখে এত বড় কথা আসে কোথা থেকে?’
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে কৃষক লীগের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ কোনো দিন পালায়নি। জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া চেষ্টা করেও শেষ করে দিতে পারেনি আওয়ামী লীগকে। তাদের দোসর জামায়াত, এতকিছু করেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। ২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়ে দেশত্যাগ করেছিল তারেক জিয়া। সেই পলাতক আসামি বলে, আমরা নাকি পালানোর পথ খুঁজে পাবো না। আরে তোরা তো পালিয়ে আছিস! পলাতক আসামির মুখে এত বড় কথা আসে কোথা থেকে?’
আরও পড়ুন- গাইবান্ধায় বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবিতে সভা
তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণ নির্যাতন আওয়ামী লীগের উপর এবং আমার ওপর তারা করেছে, এর একভাগও প্রতিশোধ নিলে তো তাদের হদিসই পাওয়া যেতো না। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। প্রত্যেককে তার কর্মসূচি করার সুযোগ দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭১ এর ধ্বংসস্তূপ থেকে দাঁড়িয়েই জাতির পিতা এ দেশ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় তাকে বিদায় নিতে হল। তার ইতিহাসটুকুও মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। এটা প্রমাণিত সত্য। আমি যখন এসেছিলাম, কোথায় থাকবো, সেটাও ঠিক ছিল না। শুধু এতটুকু জানতাম আমার যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগণ আমার মূল শক্তি। এদের ওপর নির্ভর করেই আমি সেদিন এয়ারপোর্টে নেমেছিলাম। বাংলার মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছিল। আমিও তাদের আপন করে নিয়েছিলাম। আমার প্রত্যয় ছিল- আমার বাবার দিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা নস্যাৎ হতে দেওয়া যাবে না। আজকে সেটা প্রমাণ করেছি। আওয়ামী লীগই পারে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে, দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে।’
আরও পড়ুন- জিমেইল-ইউটিউব অ্যাকাউন্ট ডিলিট করবে গুগল
সরকার প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার ইতিহাসে প্রথম একটা স্থিতিশীল অবস্থা বাংলাদেশে বিরাজমান। যে কারণে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়শীল বাংলাদেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমরা খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দিয়েছি, অথচ বিএনপি এটি চায়নি। তারা হাত পাততেই পছন্দ করে। এতেই তাদের লাভ। কিন্তু আমরা ভিক্ষুক জাতি হতে চাই না। আমার মাটি, সোনার মাটি, উর্বর মাটি। বীজ ফেললেই গাছ হয়, সেদেশের মানুষ না খেয়ে থাকবে কেন?’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষকরাই আমাদের অন্ন জোগায়। জাতির পিতা কৃষকদের সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কৃষকরা কষ্ট করে ফসল ফলায়। আমাদের তাদের সেই কষ্টের মূল্য দিতে হবে। আওয়ামী লীগ সেটা করে। সারের দাম কমিয়েছি। বিদ্যুৎ নিশ্চিত করেছি। কৃষিখাতে ভর্তুকি আমরা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবসময় মানুষের পাশে থাকি, তাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজটি আমরা করছি।’
আরও পড়ুন- টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যাওয়া বুয়েটের ৩৪ শিক্ষার্থী আটক
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট ঘাতকরা শুধু হত্যাকাণ্ড ঘটায়নি। তারা দেশের ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নামটাও মুছে দিয়েছিল। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে এ দেশের মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল। সেই স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল বাংলাদেশে। ৭ মার্চের যে ভাষণ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, সেই ভাষণও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। স্বাধীনতার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নস্যাৎ করে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হয়েছিল, যেসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছিল তাদের কারাগার থেকে মুক্ত করে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষের যদি আপনজন খুন হয়, তবে তারা বিচার চায়। কিন্তু আমরা ১৫ আগস্ট যারা আপনজন হারিয়েছিলাম, আমাদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকারই ছিল না। এমনকি মামলা করারও অধিকার ছিল না। উল্টো সেই খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। শুধু তাই না, জিয়াউর রহমান তাদের পুরস্কৃত করে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে, সেটাকে আবার ভোট কারচুপির মাধ্যমে সংসদে পাস করা হয়। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় এসে সেই ফারুককে (বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুক) ফ্রিডম পার্টি তৈরি করা ও রাজনীতি করার সুযোগ দেয়, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে জনগণের ভোট চুরি করে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে। যেই নির্বাচনে ২-৩ শতাংশ ভোটও পড়েনি। জনগণের ভোট চুরি করে কর্নেল রশিদকে তিনি সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসায় এবং হুদাকে সংসদ সদস্য করেন। খুনিদের উৎসাহিত করে একের পর একে অমানবিক কাজ করে গেছেন। আর বাংলাদেশকে জঙ্গির দেশ বানিয়েছিল।
আরও পড়ুন- যতই গ্রেপ্তার করুক, জনগণের ঢল থামানো যাবে না: মির্জা ফখরুল
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য বারবার বাধা এসেছে। সেই বাধা দিয়েছে ওই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের যারা মাস্টার প্রভু। তারা কিন্তু এই চক্রান্তে এখনও লিপ্ত। আমি যখন দেশে ফিরি তখন প্রতি পদে পদে বাধা এসেছে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পার হতে হয়েছে। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের একমাত্র শত্রু আওয়ামী লীগ। তাই আওয়ামী লীগকে তারা কোনোমতেই ক্ষমতায় আসতে দেবে না। সেইসব প্রতিবন্ধকতা পার হয়েই কিন্তু আজকে আমরা শুধু ক্ষমতায় আসা না, আমরা প্রমাণ করেছি যে—আওয়ামী লীগই পারে এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে।
কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্রের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিমসহ আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের শীর্ষ নেতারা।