ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবারের (২ জুন) এই দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ হিসাবে সংকেতের বিভ্রান্তিকে চিহ্নিত করেছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তদন্তকারী দল। এ ট্রেন দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৮০৩ জন। এরইমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি হাসপাতালে আহতদের সাথেও দেখা করেছেন।
দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম লাইভমিন্ট বলেছে, প্রাথমিক তদন্তে কলকাতা থেকে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভুলবশত বালাসোরের বাহাঙ্গাবাজার স্টেশনের লুপ লাইনে (বাড়তি লাইনে) প্রবেশ করেছিল বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। লুপ লাইনের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনে আঘাত হানে সেটি।
আরও পড়ুন- শার্শায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা পেল পাঞ্জাবি ও হিজাব
এরমাঝেই তৎসংলগ্ন লাইনে আসে বেঙ্গালুরু-হাওরা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি। করমন্ডল এক্সপ্রেসের আঘাতে মালবাহী ট্রেনের উল্টে যাওয়া বগি লাইনের মাঝে পড়ে থাকায় বেঙ্গালুরু-হাওরা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটিও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
তদন্ত সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম পিটিআই বলেছে, করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঘণ্টায় ১২৮ কিলোমিটার গতিতে চলছিল। আর বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় ১১৬ কিলোমিটার। এই দুই ট্রেনে প্রায় দুই হাজার যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনার কবলে পড়া তৃতীয় মালবাহী ট্রেনটি সেখানে আগে থেকেই স্থির দাঁড়িয়ে ছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান লাইনে সবুজ সংকেত দেওয়া হলেও করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি সেই লাইনে প্রবেশ করেনি। ট্রেনটি ঢুকে পড়েছিল লুপ লাইনে। সেখানে আগে থেকে একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। এই ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে করমন্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।
প্রাথমিক এই তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ‘এর মাঝে ডাউন লাইন দিয়ে বালেশ্বরের দিকে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনের দু’টি বগি লাইনচ্যুত হয়।’
আরও পড়ুন- বাজেট ২০২৩-২৪ঃ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ অঙ্কে বাড়লেও কামেছে শতাংশে
প্রধান লাইনে সবুজ সংকেত পাওয়া সত্ত্বেও করমন্ডল এক্সপ্রেস কীভাবে লুপ লাইনে ঢুকে পড়েছে, সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে কামরা ছিল মোট ২৩টি। সংঘর্ষের কারণে এই ট্রেনের অন্তত ১৫টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। দেশটির রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, এই দুর্ঘটনার বিষয়ে ভারতের রেলওয়ে নিরাপত্তাবিষয়ক কমিশনারের তত্ত্বাবধানে বিস্তারিত তদন্ত হবে।
গতকাল শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যা সাতটার দিকে বালাসোরের বাহাঙ্গাবাজার স্টেশনের কাছের এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৮৮ জন নিহত হয়েছেন। ভারতের গত ২০ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৮০৩ জন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।