নিখোঁজের দুই দিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে লাশ পাওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের দেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
আজ মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শেখ ফরহাদ এই তথ্য জানান।
শেখ ফরহাদ জানান, ফারদিনের মাথার বিভিন্ন অংশ এবং বুকের ভেতরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা বুঝতে পেরেছি, এটি হত্যাকাণ্ড।’
দ্রুত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে এসময় জানান তিনি।
সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলের পেছনে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ।
নিহত ফারদিন নূর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি এলাকার কাজী নুর উদ্দিন রানার ছেলে। তারা রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়া শান্তিবাগ এলাকায় তাদের বাসা।
আরও পড়ুন- ৫০ মণ জাটকাসহ কলাপাড়ায় ট্রাক জব্দ
ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বলেন, আমি আমার সন্তানকে ফিরে পাব না। বিচার হোক, এটি আমরা চাই। মেধাবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে, এটা বন্ধ হোক।
তার বাবা নুর উদ্দীন রানা দ্যা রিভারাইন নামের একটি মাসিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক।
নুর উদ্দীন রানার সহকর্মী নাবিল চৌধুরী জানান, গত ৪ নভেম্বর ফারদিন কোনাপাড়ার বাসা থেকে বুয়েট আবাসিক হলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। শুক্রবার হলে থেকে শনিবার পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরে আসার কথা ছিল তার। পরবর্তী সময়ে জানতে পারেন, শুক্রবার পরশ তার বান্ধবী বুশরাকে নিয়ে দুপুরে ধানমন্ডি এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করেন। পরে নীলক্ষেত থেকে বই কেনেন। এরপর টিএসসিতে এসে চা খান। পরে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বুশরাকে রামপুরায় পৌঁছে দেন। এরপর থেকেই তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, পরশ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। পরে তার ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলে বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন- কলাপাড়ায় জাতীয় যুব দিবস পালিত
পরশের বাবার করা জিডিতে বলা হয়, ৪ নভেম্বর ফারদিন কোনাপাড়ার বাসা থেকে বুয়েট আবাসিক হলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যান। শুক্রবার হলে থেকে শনিবার পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরে আসার কথা ছিল তার। পরবর্তী সময়ে জানতে পারেন, ফারদিন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। ফারদিনের ফোন নম্বরে তারা যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যায়নি।
জিডিতে আরও বলা হয়, শত্রুতার জেরে কেউ পরশকে হত্যা করে থাকতে পারে।
এদিকে লাশের সঙ্গে দামি মুঠোফোন, ঘড়ি ও মানিব্যাগ পাওয়া গেছে। কিছুই খোয়া যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ নৌ বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘৪ নভেম্বর ফারদিন নূর নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় নিখোঁজের বাবা কাজী নুরুউদ্দিন রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। আমাদের থানায় এখনও কোনো মামলা করা হয়নি।
মেধাবী ফারদিন এসএসসি ও এইচএসসিতে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন। ফারদিন পড়ালেখার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজে জড়িত ছিলেন। তিনি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আসা-যাওয়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।’