ঢাকাThursday , 13 October 2022
আজকের সর্বশেষ সবখবর
  • শেয়ার করুন-

  • বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের অভিযোগ

    Link Copied!

    শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে গোপনে তথ্য জেনে শেয়ার বিক্রির (ইনসাইডার ট্রেডিং) অভিযোগ উঠেছে।

    আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের গত বছরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদন প্রকাশের অনেক আগেই নিজের হিসাব থেকে এ কোম্পানির সব শেয়ার বিক্রি করে দেন তিনি। এভাবে শেয়ার বেচে আলমগীর কবির প্রায় আড়াই গুণ মুনাফা তুলেছেন। তাঁর স্বার্থসংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস থেকেও প্রচুর শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। বে-লিজিংয়ের আর্থিক প্রতিবেদনের যথার্থতা এবং ইনসাইডার ট্রেড নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ বিষয়ে তদন্তে নেমেছে বিএসইসি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব শেয়ারবাজারের আইনে ইনসাইডার ট্রেডিং গুরুতর অপরাধ।

    আলমগীর কবির সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জানতে পারেন এমন ব্যক্তিদের অন্যতম। তার স্ত্রী সুরাইয়া বেগম বে লিজিংয়ের একজন উদ্যোক্তা পরিচালক, ভাগনে তারিক সুজাত ও ভাতিজা জুবায়ের কবির পরিচালক।

    স্বতন্ত্র পরিচালক জাইদি সাত্তার সাউথইস্ট ব্যাংক ফাউন্ডেশনের পরিচালক। আবার শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বে লিজিংয়ের ইভিপি এম মনিরুজ জামান খান সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক।

    আরও পড়ুন- জন্মের পরই দেওয়া হবে এনআইডিঃ মন্ত্রিপরিষদ সচিব

    ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে প্রথম ধসের সময় আলমগীর কবির বিএসইসির সদস্য ছিলেন। তিনি কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। পরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার তাঁকেসহ সে সময়কার অন্য সদস্যদের অপসারণ করেছিল। আলমগীর কবির এখন সাউথইস্ট ব্যাংকের পাশাপাশি সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেসেরও চেয়ারম্যান। মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের পর কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়তে বা কমতে পারে। সাধারণত বেশি মুনাফা পেতে বা লোকসান কমাতে ইনসাইডার ট্রেড করা হয়। কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালক, শীর্ষ কর্মকর্তাসহ তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যরা ‘ইনসাইডার’ হিসেবে বিবেচিত হন। আলমগীর কবির শেয়ারবাজারে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের ক্ষতিকর দিক এবং এ-সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়টি জানেন। বিএসইসি সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন, বে-লিজিংয়ের অন্যতম ইনসাইডার হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগে জেনে আলমগীর কবির এবং তাঁর স্বার্থসংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেছেন।

    এ ছাড়া সাউথইস্ট ব্যাংক এবং ব্যাংকটির মালিকানাধীন সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস বে লিজিংয়ের শীর্ষ শেয়ারহোল্ডার। ২০১০ সাল থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সাউথইস্ট ব্যাংক এবং সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস বে লিজিংয়ের প্রায় ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল। বর্তমানে সাউথইস্ট ব্যাংকের মালিকানায় আছে ১ কোটি ৪০ লাখ ১২ হাজার ৪০৫টি শেয়ার, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

    বে লিজিংয়ের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন প্রান্তিকে বা ৯ মাসে কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল প্রায় ৩৯ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ২ টাকা ৭৫ পয়সা। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশের আগে মুনাফার এই তথ্য সাড়ে ১০ মাস ধরে জানতেন শেয়ারহোল্ডাররা।

    তবে পুরো অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর জানা যায়, শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ’২১) কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে প্রায় ৫৩ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি লোকসান ৯৯ পয়সা। প্রথম ৯ মাস ধারাবাহিক মুনাফা করার পর শেষ তিন মাসে তার চেয়েও বড় অঙ্কের লোকসান বিএসইসির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ মনে হয়েছে।

    আরও পড়ুন- নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ

    সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা লোকসানের এই তথ্য চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জানলেও ইনসাইডারদের এই তথ্য জানার সুযোগ ছিল গত ডিসেম্বরের পর থেকেই। কোম্পানিটির অধোগতির গোপন এই তথ্য জেনে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বে লিজিংয়ের অন্যতম প্রধান শেয়ারহোল্ডার সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস ১ কোটি ৩৬ লাখ শেয়ার থেকে ১ কোটিরও বেশি বিক্রি করেছে।

    এ ছাড়া সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং বিএসইসির একসময়ের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলমগীর কবির তার ব্যক্তিগত বিও হিসাবে থাকা প্রায় ৪০ লাখ শেয়ারের সবটাই বিক্রি করে দিয়েছেন।

    বে লিজিংয়ের আর্থিক প্রতিবেদনের সীমাহীন এই অসংগতি খতিয়ে দেখতে গত ২২ সেপ্টেম্বর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি একটি তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটিকে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রান্তিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য যাচাই করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কোনো ইনসাইডার ট্রেডিং হয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

    বিএসইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, বে লিজিংয়ের ইনসাইডার ট্রেডিং হয়েছে এমন প্রাথমিক তথ্য জেনেই কমিশন তদন্ত কমিটি করেছে। তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সব ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কাছে এই সম্পর্কিত কোনো তথ্য থাকলে তা জানাতে চিঠি দিয়েছে।

    আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুরে শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

    প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নিজের নামে থাকা বে লিজিংয়ের সব শেয়ার আলমগীর কবির বিক্রি করেছেন গত এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে। এসব শেয়ার তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে ধারণ করেছিলেন। এখন তার বিও হিসাবে বে লিজিংয়ের একটি শেয়ারও নেই।

    অন্যদিকে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেসের নামে বে লিজিংয়ের ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার ২০৯টি শেয়ার ছিল। এখন আছে মাত্র ৩০ লাখ শেয়ার। গত জানুয়ারিতে মার্চেন্ট ব্যাংকটি ৪১ লাখ ৫৫ হাজার এবং ফেব্রুয়ারিতে ৬১ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার প্রায় ৩৫ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি করেছে।

    বাজার তথ্যে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে বে লিজিংয়ের শেয়ারটি দাম সর্বোচ্চ ৩৭ টাকায় উঠেছিল। এর পর থেকে ক্রমাগত পতন হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার ২৩ টাকা ৯০ পয়সায় ফ্লোর প্রাইসে দিনের পর দিন বিক্রেতাশূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফ্লোর প্রাইস না থাকলে শেয়ারটির দাম আরও অনেক কমার শঙ্কা ছিল।

    জে এম আলী নয়ন

    সর্বমোট নিউজ: 4964

    Share this...

    বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
    ঢাকা অফিসঃ ১৬৭/১২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা- ১০০০ আঞ্চলিক অফিস : উত্তর তেমুহনী সদর, লক্ষ্মীপুর ৩৭০০