চাঁদার টাকা দিতে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজারের ৫টি স্থানে ট্রাক থামাতে হয়। হাটবাজারের রশিদের মাধ্যমে ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত এচাঁদা উত্তোলন করা হয়। চাঁদাবাজ থেকে মুক্তিতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কোথাও চাঁদা হাটে, কোথাও চাঁদা সড়কে, কোথাও আবার চাঁদা উঠছে বাঁধের নামে। উপজেলার বৃহত্তম মেঘনা উপকূলী পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন পন্যের পরিবহন নিয়ে ওই সড়কে উঠলেই দিতে হচ্ছে দফায় দফায় চাঁদা। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এ চাঁদাবাজির উৎপাতে নাজেহাল।
তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ চাঁদাবাজির বিষয়ে কিছুই অবগত নন বলে দাবি করেছেন।
শুক্রবার সন্ধায় (৭ অক্টোবর)-সরেজমিন ঘুরে ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানাযায়, রায়পুরসহ হায়দরগঞ্জবাজার স্থান থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চলের ফসলসহ বিভিন্ন ফলের পরিবহন । এসব ট্রাকসহ ছোট -বড় যানবাহনে বিভিন্ন হাট বাজারের রশিদ ব্যবহার করে আদায় হচ্ছে কোথাও ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে চাঁদার টাকা দিতে ৫টি স্থানে সব পরিবহন থামাতে হয়। সুলতানসহ কয়েক জন পৃথক পৃথক এ চাঁদা উত্তোলন করছে।।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, উপজেলা মেঘনা উপকূলে উত্তর চরবংশি, দক্ষিন চরবংশি, উত্তর চরআবাবিল ও দক্ষি ন চরআবাবিল ইউনিয়নের বিশাল চরাঞ্চলে সয়াবিন ও ধানসহ বিভিন্ন ফসল খুব ভালো চাষ হয়। বেচাবিক্রিতে সরগরম স্থানীয় হাট ও সয়াবিন ও ধানের মাঠ। বিভিন্ন এলাকার সয়াবিন ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই আসছেন সেখানে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কয়েক শ’ ট্রাক সয়াবিন ও ধান কিনছেন হায়দরগঞ্জের হাট থেকে।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার হায়দরগঞ্জ। রায়পুর, সদর, হাইমচর ও চরভৈরবি উপজেলা থেকে পরিবহন আসে। এবছর কোন ব্যাক্তি ইজারা না নেয়ায় ইউএনও’র নির্দেশে তহসিলদার ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে শুধু বাজার থেকে খাস কালেকশান আদায় করবেন। কিন্তু বাজারের কয়েকজন ব্যাক্তি নীজেদের ইচ্ছেমত ইউএনওর অগোচরে ট্রাকে শুধু সয়াবিন-ই না, সবধরনের ফসল ও পন্য লোড করার সময় থেকে চাঁদা শুরু। হাট বাজারের রশিদ ব্যবহার করে প্রতিদিন চাঁদা আদায় হচ্ছে। দাবি করা টাকা না পেলে বড় ট্রাকসহ পরিবহন আটকে রাখা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন চালকরা।
চরআবাবিল ইউপির ভূমি অফিসের তহশিলদার আলী হোসেন বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুসারে বাজার থেকে খাস কালেকশান করা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে ৫০-২০০ টাকা আদায় করছে, তা তো জানিনা। এবিষয়ে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলবো।’
শুক্রবার সন্ধায়-সড়কে চাঁদা আদায়ের সময় সুলতান নামের যুবককে ধরলে সে বলেন, ইউপি মেম্বার মহিউদ্দিন গাজির নির্দেশে সড়কে পরিবহন থেকে চাঁদা তুলছি। যা বলার, তাকে বলেন, এবলে সিএনজি ষ্টেশান থেকে ভোঁ-দৌড়। পরে হায়দরগঞ্জ ফাড়ির দুই এসআই সিএনজি ষ্টেশান থেকে রেজিষ্ট্রেশানবিহীন মোটরসাইকেল নিয়ে যান।
হায়দরগঞ্জ বাজারের বটতলা নামক সিএনজি ষ্টেশনের প্রায় ১৫ জন চালক বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে হায়দরগঞ্জবাজারে আসা ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে ‘ অনেকদিন ধরে চাঁদা তোলা হয়। টাকা না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়। গত ১০-১৫ বছর ধরে এচাঁদা তুলছে স্থানীয় নেতারা।
প্রকাশ্য চাঁদাবাজির বিষয়ে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। পরিবহন থেকে যদি কেউ চাঁদা নেয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ফাঁড়ির ইনচার্জকে নজরে রাখতে বলা হয়েছে।
রায়পুর উপজেলার নির্বাহী কমকর্তা (ইউএনও) অনজন দাশ বলেন, ‘সড়কে চাঁদাবাজি হওয়ার কথা না। ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে। সড়কে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’