কুড়িগ্রামের উলিপুরে উপজেলার তিস্তা পাড়ের নিম্ন আয়ের মানুষ ও তিস্তার গর্ভে সহায় সম্বল বিলীন হওয়া মানুষ নেপিয়ার ঘাস ও কাশিয়াগাছের শুকনো পাতা দিয়ে খরগোশের পাপোশ ও রাউন্ড হাউজ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সরেজমিন শুক্রবার উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১শ’র বেশি পরিবার খরগোশের পাপোশ ও রাউন্ড হাউজ তৈরি করতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। খরগোশের পাপোশ ও রাউন্ড হাউজ তৈরি করে জিবীকা নির্বাহ করছেন বলে জানান তারা। তিস্তা পাড়ের নিম্ন আয়ের মানুষ বলেন আমাদের জমাজমি বাড়ি ভিটে তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আমরা অন্যের জায়গায় ও বাঁধের রাস্তায় বাড়ি করে আছি। আমাদের কোন আয় রোজগার না থাকায় নিজ হাত দিয়ে নেপিয়ারের শুকনো ঘাস দিয়ে খরগোশের পাপোশ ও কাশিয়াগাছের পাতা দিয়ে খরগোশের রাউন্ড হাউজ তৈরি করে জিবীকা নির্বাহ করছি।
উক্ত এলাকার খরগোশের পাপোশ ও রাউন্ড হাউজ তৈরি করা রফিকুল, জাহানারা, সামছুন্নাহার, আলেয়া, আয়শা, দোলেনা, হাসিনা, ছাদেকা, আকলিমা সহ আরও অনেকে বলেন, আমাদের এলাকার মাহাজান আইয়ুব আলী নেপিয়ার ঘাস ও কাশিগাছের শুকনো পাতা দিয়ে যান তা দিয়ে আমরা পরিবারের সকল সদস্য মিলে খরগোশের পাপোশ ও রাউন্ড হাউজ তৈরি করি। এগুলো তৈরি করে যা টাকা উপার্জন করি তা দিয়ে আমরা কোনরকম ভাবে সংসার চালাই। তিস্তা পাড়ের নিম্ন আয়ের মানুষেরা বলেন এটাই আমাদের একমাত্র অর্থ আয়ের পথ।
একই এলাকার হামিদা জানান, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ জন। আমার সংসার চালাতে হিমসিম খেতাম। এখন খরগোশের পাপোশ ও রাউন্ড হাউজ তৈরি করে টাকা উপার্জন করে জিবীকা নির্বাহ করছি। তিনি আরও বলেন পরিবারের সকল সদস্য মিলে খরগোশের পাপোশ ও রাউন্ড হাউজ তৈরি করি। পরিবারের সমস্ত কাজ শেষ করেও অবসর সময়ে এ গুলো তৈরি করা যায়। দিনে ১০ থেকে ১৫ টি পাপোশ তৈরি হয়। যার মুল্য পেয়ে থাকি ১৫ থেকে ২০ টাকা। দিনে টাকা আয় হয় ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। রাউন্ড হাউজ দিনে তৈরি হয় ২টা যার মুল্য ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
আরও পড়ুন- কুড়িগ্রামের তিস্তা পাড়ের মানুষের এ দুঃখের শেষ কোথায়?
উক্ত এলাকার মাহাজন ও ব্যাবসায়ী আইয়ুব আলী বলেন, আমি নেপিয়ার ঘাস ও কাশিগাছের পাতা বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে ১০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে এসেছি। তা বাসায় শুকিয়ে গ্রামের প্রায় ১শ পরিবারের মাঝে বিতরণ করি। তারা এগুলো তৈরি করে আবার সে গুলো আমি বিভিন্ন দামে যেমন পাপোশ ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং রাউন্ড হাউজ ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় ক্রয় করে নিয়ে আমি ময়মনসিংহ ভালুকায় আমার মাহাজনের নিকট পাঠিয়ে দেই। মহাজন আমাকে পাপোশ বাবদ প্রতি পিছ ৫০ টাকা রাউন্ড হাউজ বাবদ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দেন। ১০ হাজার টাকার নেপিয়ার ঘাসে লাভ হবে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। সেখান থেকে তারা বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেয়।
উক্ত এলাকার ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান মন্টু বলেন, আমার এলাকা অত্যান্ত দারিদ্র এলাকা। এখানে তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়ি ঘর ভিটেমাটি। তার এখন অসহায়। তারা দু’মুটো ভাত খাবার জন্য পরিবারের সকল সদস্য খরগোশের পাপোশ ও রাউন্ড হাউজ তৈরি করছেন। এতে যা আয় রোজগার করে তা দিয়ে একরকম ভাবে সাংসার চালান তারা। তিনি বলেন এলাকা ব্যাবসায়ী আইয়ুব আলী যে কাজটি নিয়ে এসে দিয়েছেন তাতে দারিদ্র্য মানুষের অনেক উপকার হয়েছে।