রাজশাহীর পবা উপজেলার হাড়ুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার নির্দেশে এক সহকারী শিক্ষিকাকে কান ধরিয়ে ওঠবস করানোর অভিযোগের তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এ ঘটনায় দুই শিক্ষিকাকেই বদলির সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে জমা দিয়েছে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম।
এর আগে গত ২৪ আগস্ট হাড়ুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে তার স্কুলের এক সহকারী শিক্ষিকাকে কান ধরে ওঠবস করানোর অভিযোগ ওঠে। বিদ্যালয়ের জমিদাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজের সামনে হেনস্তার অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এরপরই ভুক্তভোগী শিক্ষিকার কান ধরে ওঠবস করার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি তদন্তে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে দুই শিক্ষককে বদলির সুপারিশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠানো হয়।
বিষয়টির নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম। তিনি জানান, সহকারী ওই শিক্ষিকাকে কান ধরে ওঠবস করানোর সত্যতা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষিকার ছবি দিয়ে টিকটক বানানোর বিষয়টিও কয়েকজন শিক্ষক দেখেছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তবে কেউই আলামত সংরক্ষণ করেননি। তাই ২টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২ জনকেই পৃথক দুটি স্কুলে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। এখন বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন।
আরও পড়ুন- এক লাখ ৪২ হাজার ইয়াবাসহ তিন রোহিঙ্গা আটক
এদিকে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষিকা আমার সঙ্গে অন্যায় করেছেন। বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও এখনো কিছুই হয়নি। প্রধান শিক্ষিকা এখনো বিভিন্নভাবে আমাকেসহ আরও কয়েকজন শিক্ষিকাকে চাপের মুখে রেখেছেন। অভিভাবকদের সামনে বিভিন্নভাবে অপমান করছেন। আমি মানসিকভাবে বিষয়টি আর মেনে নিতে পারছি না। আমি দ্রুত বিষয়টির সমাধান চাইছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষিকা নাজমা ফেরদৌসী বলেন, আমার ছবি ব্যবহার করে অশালীন ও নোংরা টিকটক বানানো হয়েছে। এটি সবাই জানেন। এ কারণে ওই শিক্ষিকাকে সতর্ক করা হয়। তবে কান ধরে ওঠবস করার বিষয়টি সঠিক না বলে দাবি করেন তিনি। তবে তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি প্রধান শিক্ষিকা নাজমা ফেরদৌসি।
তবে এ বিষয়ে পবা উপজেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান চাইছি। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকে চেয়ে আছি। আমার বিশ্বাস তারা বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করবেন। তারপরেও সমাধান না হলে সহকারী শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আর বিষয়টি নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে অচিরেই দেখা করব। তিনি আমাদের অভিভাবক। তার কাছে বিচার চাইব।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট হাড়ুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমা ফেরদৌসী ও তার স্বামীর নেতৃত্বে ওই সহকারী শিক্ষিকাকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। ওই দিনই এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা।