তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর :
অবশেষে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে কওমী মাদরাসার নিখোঁজ ছাত্রকে ১০ দিন এবং সুপারকে দুইদিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার সকালে (২৭ জুলাই) ওই ছাত্রকে ঢাকার সদরঘাট এলাকার খাবার হোটেলে এবং একই দিন পাবনা শহরে সরকারি হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় ওই ছাত্রের মা বলেন, শিক্ষকরা ছাত্রদের উপর পাশবিক (বেত্রাঘাত ও বলাৎকার) নির্যাতনের কারনে তার ছেলে ওই মাদরাসা না গিয়ে ক্ষোভ করে ঢাকা চলে যায়। অন্যদিকে-সুপারকে রাতে থানায় নিয়ে আসলে তার বিষয়ে পরে জানতে পারবেন বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চমকা বাজার এলাকায় অবস্থিত জামিআ আল্লামা যফর আহমদ উসমানী কওমী মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্র তাঁরা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে রায়পুর থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করা হয়েছে। এর আগেও ওই মাদরাসার ১০ বছরের এক শিশুকে অপর দুই শিক্ষক পাষবিক নির্যাতন করে পালিয়ে যান।
উদ্ধার হওয়া হাফেজ মুফতি তারেকুল ইসলাম (২৮) ওই মাদরাসার সুপার এবং খাসেরহাট জামে মসজিদের ইমাম। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার সওদাগরপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম বাড়ির আবু তাহেরের ছেলে। ছাত্র আব্দুর রশিদ (১৬) উত্তর চরবংশী গ্রামের বেপারী বাড়ির সুফিয়ান রহমানের ছেলে ও ওই মাদরাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র।
আব্দুর রশিদের মা মাসুদা বেগম বলেন, আমার ছেলে গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যার পর মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরদিন বিকেলে খোঁজ নিলে তাকে মাদরাসায় পাওয়া যায়নি। ওই দিন সে মাদরাসায় না গিয়ে গোপনে লঞ্চে করে ঢাকা সদরঘাটের এক খাবার হোটেলে গিয়ে কাজ করে। ভোরবেলায় ওই হোটেলের সামনের কলে কাজ করার সময় তার বাবা দেখতে পান রশিদকে। এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে থানায় জিডি করি।
হাফেজ মুফতি তারেকুল ইসলামের ভাই মুহাম্মদ তানবীরুল ইসলাম মোবাইলে জানান, সোমবার ভোরবেলা ফজরের নামাজের পর থেকে বড় ভাইকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাবনা থেকে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি তিনি সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁকে উদ্ধার করে রায়পুর থানায় আসছি। তখন কথা বলবো।নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে রায়পুর থানায় জিডি করেছিলাম।
উল্লেখ্য, ঈদুল আযহার আগে ওই মাদরাসার ১২ বছর বয়সী এক ছাত্রকে মনিরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক পাষবিক (বলৎকার) নির্যাতন করেন। ওই সময় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসি মাদরাসা ঘেরাও করলে ওই শিক্ষকও পালিয়ে যান। একই ছাত্রকে ওই ঘটনার প্রায় ৩ মাস আগে মনির হোসেন নামের অপর শিক্ষক পাষবিক নির্যাতন করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। একের পর এক ঘটনায় মাদরাসাটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা স্কুল শিক্ষক মুরাদ হোসেন বলেন, মাদরাসার সুনাম রক্ষার্থে ছাত্রের সাথে পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় পূর্বের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি। তাঁরা পালিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। সুপারকে খাসেরহাট বাজার থেকে হাত পা বেধে মুখোশপড়া অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা মাইক্রোবাসে করে পাবনা নিয়ে যায়। আমরা তাকে রায়পুর থানায় নিয়ে আসলে তখন সব জানতে পারবেন।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বলেন, ছাত্র ও সুপার নিখোঁজের ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি জিডি করা হয়েছিলো। নিখোঁজদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হবে। তখন জানতে পারবো আসল ঘটনা কি।