২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। মেরিকায় চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই সেগুলো দিয়ে আঘাত হানা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের গর্ব ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা টুইন টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। ধ্বংস হয় পাশের আরেকটি ছোট ভবনও। হামলার শিকার হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন। যে ঘটনায় প্রাণ হারায় প্রায় তিন হাজার মানুষ। ছয় হাজারের অধিক মানুষ আহত হয় এবং ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক অবকাঠামো ও সম্পদ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
এই হামলা ছিল শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ একটি হামলা। শুধু যুক্তরাষ্ট্রবাসীর জন্যই নয়, গোটা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল ঘটনার ভয়াবহতায়। ওই হামলায় পেন্টাগন এবং শেঙ্কসভিল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মুহূর্তেই ধসে পড়েছিল টুইন টাওয়ার
ভয়াবহ ওই হামলার ২১তম বার্ষিকী আজ। এটি ৯/১১ নামেও পরিচিত।
আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তথ্যমতে, চারটি যাত্রীবাহী বিমানের মধ্যে দু’টি বিধ্বস্ত করা হয়েছিল নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ভবনে। প্রথম বিমানটি আঘাত হানে নর্থ টাওয়ারে। দ্বিতীয় বিমানটি সাউথ টাওয়ারে। দু’টি ভবনেই আগুন ধরে যায়। ভবন দু’টির ওপরতলায় মানুষজন আটকা পড়েন। দু’টি টাওয়ার ভবনই ছিল ১১০ তলা। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে দুটি ভবনই বিশাল ধুলার ঝড় তুলে মাটিতে ভেঙে গুঁড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় বিমানটি মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনে হামলা চালায়। চতুর্থ বিমনাটি পেনিসেলভেনিয়ার আকাশেই বিধ্বস্ত হয়।
৯/১১ নামে পরিচিতি পাওয়া ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ শামিল হয় পশ্চিমা দুনিয়া। ওই হামলার জন্য আল আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করে ওসামা বিন লাদেনের ঘাঁটি আফগানিস্তানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষমতাচ্যুত করা হয় লাদেনের মিত্র তৎকালীন তালেবান সরকারকে। এরপরই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বহুল বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু হয়। তাতেও অনেক মানুষ নিহত হন। অনেক নাটকীয়তার পর পাকিস্তানে লাদেনের হত্যার মধ্য দিয়ে শেষ হয় একটি অধ্যায়ের। তবে আক্রমণকারীরা আমেরিকাকে কী বার্তাই বা দিতে চেয়েছিলেন, নেপথ্যে কী ছিল, তা আজও পরিষ্কার হয়নি।
তবে গত ২০ বছরে পরিবর্তন এসেছে আফগানিস্তানের সেই দৃশ্যপটেও। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার দুই দশকের মাথায় গত বছর আফগানিস্তান ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্র। ফের কাবুলের কুরসি ছিনিয়ে নেয় তালেবান।
এদিকে, ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার ২১তম বার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিন বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় নিহতদের স্মরণ করবে পুরো জাতি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) ভাষণ দেবেন এবং পেন্টাগনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।
ফার্স্টলেডি জিল বাইডেন রবিবার পেনসিলভানিয়ার শ্যাঙ্কসভিলে ফ্লাইট ৯৩ ন্যাশনাল মেমোরিয়াল ওবজারভেন্সে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও তার স্বামী ডগলাস এমহফ যাবেন নিউ ইয়র্ক সিটিতে। সেখানে ৯/১১ হামলার জাতীয় স্মৃতিসৌধে একটি স্মরণ অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন তিনি।
নিহতদের স্মরণে নিউ ইয়র্কের ৯/১১ মেমোরিয়াল অ্যান্ড মিউজিয়ামে থাকবে বিভিন্ন আয়োজন। রীতি মেনে রবিবার সকালে হামলার সময়ে বেল বাজানো হবে। নিহতদের স্বজনরা উচ্চ কণ্ঠে তাদের আত্মীয়দের নাম পড়ে শোনাবেন। টুইন টাওয়ার যেখানে একসময় দাঁড়িয়েছিল সেখান থেকে আবারও শ্রদ্ধা প্রকাশের বাতি জ্বলে আকাশকে উজ্জ্বল করবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও শহরে নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।