ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মানহানির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুস সাত্তার। এ ঘটনায় সাংবাদিক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে আখাউড়া থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় দৈনিক যুগান্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ও আখাউড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলে রাব্বি এবং আরটিভির আখাউড়া উপজেলা প্রতিনিধি ও আখাউড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে ৪ আগস্ট আরটিভি অনলাইন ও ৭ আগস্ট দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ওসি আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের বিস্তারিত তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম ও কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেনের ঘুষ গ্রহণ, যাত্রী হয়রানি এবং অবৈধ পারাপারের নানা অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাওয়া যাত্রীদের কাছ থেকে ৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে নানা অজুহাতে সীমান্ত পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাত্রীদের অভিযোগে উঠে আসে, প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ আদায় করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। একাধিক ঘটনায় যাত্রীদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান, পাসপোর্টে ভুয়া সীল মারা এবং চোরাচালান চক্রকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়। এসব কর্মকাণ্ডে ওসি আব্দুস সাত্তার, এসআই আব্দুর রহিম ও কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেনের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ঘটনার পর প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিক মো. ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছি। এই মামলা হয়রানিমূলক এবং সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা। অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের কাজ সত্য প্রকাশ করা, ভয় পেয়ে পিছু হটা নয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের থামানো যাবে না। ওসির বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত হলে দুর্নীতির চিত্র পরিষ্কার হয়ে উঠবে। কিন্তু মামলা রুজুর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, আখাউড়া থানার ওসি ছমিউদ্দিন নিরপেক্ষ নন। এটি সরাসরি সাংবাদিকতার ওপর আঘাত।
আখাউড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন লিটন বলেন, সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
আখাউড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রুবেল আহমেদ বলেন, এই মামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। সাংবাদিকদের নিরাপদ পরিবেশে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
আখাউড়া সাংবাদিক কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, যদি দুর্নীতি প্রকাশ করলেই মামলা হয়, তবে সত্য প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। সাংবাদিকদের পাশে আমরা আছি। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার না হলে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে।
এ বিষয়ে আখাউড়া থানার ওসি মো. ছমিউদ্দিন বলেন, চাঁদাবাজি ও মানহানির অভিযোগে মামলাটি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে রুজু করা হয়েছে। বর্তমানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলাটি তদন্ত করছে।



