ভারত সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। আজ মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাষ্ট্রপতি ভবনে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তারা দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলেন।
এর আগে দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দুই দেশের কর্মকর্তারা ৭ সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
ভারত সফররত শেখ হাসিনা দুপুরে হায়দ্রাবাদ হাউজে পৌঁছালে নরেন্দ্র মোদি তাকে স্বাগত জানান। প্রথমে দুই নেতা একান্ত বৈঠক করেন। পরে তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।
চারদিনের সফরে গতকাল সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভারতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন দুপুরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইটে নয়াদিল্লি পৌঁছান তিনি। সেখানে তাকে লালগালিচা অভ্যর্থনা দেওয়া হয়। উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান ও বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
বিকেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। বৈঠকে মিয়ানমারের রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ভারতের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি উঠে আসে। সফরের প্রথম দিন দিল্লিতে প্রখ্যাত ওই সুফি সাধক নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী। জিয়ারত শেষে পরিদর্শনকালে দরগাহে অনুষ্ঠিত কাওয়ালি কিছুক্ষণ শোনেন প্রধানমন্ত্রী। পরে দরগাহের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে একটি ছবি উপহার দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীও দরগাহে একটি গিলাপ উপহার দেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে বৈঠক শুরু হয়েছে। দুপুরে নয়াদিল্লির ‘হায়দরাবাদ হাউস’-এ এই বৈঠক শুরু হয়। এদিন সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ সময় তাকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
এদিন রাজঘাটে ভারতের জাতির পিতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর (মহাত্মা গান্ধী) সমাধিতেও শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।
পরে রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু। আমি যখনই ভারতে আসি, এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের, বিশেষ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা আমরা সবসময় স্মরণ করি। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করছি।
মোদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, আশা করছি অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হবে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য অর্থনৈতিক উন্নতি এবং দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, যা আমরা করতে সক্ষম হবো। বন্ধুত্বের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব, যা আমরা সবসময় করে আসছি।
বৈঠকে বাংলাদেশকে ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার বলে উল্লেখ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
এ সময় বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের মধ্যকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, এমন আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো, এমনকি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টিও দ্রুতই আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে।
এদিকে সফরের দ্বিতীয় দিন মোদির সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। স্মারক সই শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথ বিবৃতি দেন।
সফরের তৃতীয় দিন আগামীকাল বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।