‘চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ও আলমগীর মেম্বারের সঙ্গে চললে তারা হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগ নেতা। আর কামরুল সরকার, হারুন মোল্লা ও আমার সঙ্গে চললে হয়ে যায় বিএনপি-জামায়াত কর্মী। তাঁর প্রমাণ কিছুদিন পূর্বে চেয়ারম্যান দেখিয়েছেন। পুলিশকে দেওয়া বিএনপি-জামায়াতের তালিকায় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের নাম দিয়েছেন তিনি। আমাদের দমিয়ে রাখতে চেয়ারম্যান দলীয় নেতাকর্মী ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় না করে তালিকা দেন।
সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে কথাগুলো প্রতিবেদককে বলেছেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ইলিয়াছ মীর।
তিনি আরও বলেন, চলমান কোটা আন্দোলন ঘিয়ে সারাদেশে ব্যাপক ধ্বংসজজ্ঞ চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। ওইসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের এখন খুঁজছে পুলিশ। সে সুযোগে চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নামসহ প্রায় ২০ জনের একটি তালিকা থানায় দিয়েছেন। এখন গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের ন্যায় আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরাও।
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ ও পরবর্তী যুবলীগ করেছেন উল্লেখ করে ইলিয়াছ বলেন, আমার বাবা সদর থানা কৃষক লীগের দায়িত্বে ছিলেন। মা ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমিও বর্তমানে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্বে আছি। অথচ চেয়ারম্যান প্রতিহিংসায় আমার ছোট ভাইয়ের নাম দিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের তালিকায়। সে ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হিসাবে রয়েছেন। এছাড়া চাচাতো ভাই ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি সেলিম মীর ও সাংগঠনিক সম্পাদক বাবলুর নামও দিয়েছেন এই তালিকায়। অর্থ্যাৎ আমি, কামরুল সরকার ও হারুন মোল্লার আত্মীয় স্বজন এবং আমাদের কর্মীদের নাম তিনি বিএনপি-জামায়াত তালিকায় দিয়েছেন।
আল্লাহ বাচাঁইছে, যদি আমার বাবা বেঁচে থাকত ও আমি যদি আহ্বায়ক না হতাম তাহলে তিনি আমাদের নামও ওই তালিকায় দিতেন। অথচ ওনার ভাতিজা, ভাগিনা, ভাগনি জামাই সহ অনেকে ইউনিয়ন বিএনপি ও যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু তিনি তাদের নাম ওই তালিকায় দেননি।
ইলিয়াছ মীর আরও বলেন, তাদের এসব অনিয়মের কারনে আমরাও ইউনিয়ন যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ একত্রিত হয়ে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও চেয়ারম্যানের আত্মীয়দের (যুবদলে থাকা) তালিকা করে থানায় জমা দিয়েছি। এখন পুলিশ ওই তালিকার লোকদেরও গ্রেফতার করতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালাচ্ছে।
চর রমনি মোহন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগির হোসেন বলেন, নাশকতাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের তালিকা থানায় দেওয়া হয়েছে। ওই দল দুটির রাজনীতি ও অপরাধগুলোর সঙ্গে প্রত্যেকের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ (ছবি-ভিডিও) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাছে রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নাম সেই তালিকায় দেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল বলেন, সদর থানায় জমা দেওয়া বিএনপি-জামায়াতের তালিকাটি আমি দেয়নি। তবে যতটুকু জানি, ওই তালিকায় থাকা প্রত্যেকে বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া ইলিয়াছ মীরের ছোট ভাই, চাচাতো ভাই ও কামরুল সরকারের চাচা এবং চাচাতো ভাইরা বিএনপির রাজনীতি করে। তারা বিএনপি, যুবদল, তাতীদলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বে আছে।
এবিষয়ে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াছিন আরাফাত বলেন, নাশকতা ও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকা চর রমনি মোহন ইউনিয়নের কয়েকজনের তালিকা পেয়েছি। পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।
উল্লেখ্য, আলমগির হোসেন চর রমনি মোহন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য। আবু ইউসুফ ছৈয়াল চর রমনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। কামরুল সরকার ওই ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক ও হারুন মোল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। ইলিয়াছ মীর চর রমনি মোহন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক।