সরকারি পানির পাম্প ও ঘর লুটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লক্ষ্মীপুরের এক এমপির প্রতিনিধির বিরুদ্ধে। প্রায় অর্ধ কোটি টাকার সুপেয় পানির প্রকল্পটি লুটে নেওয়া হয় টেন্ডার ও অনুমতি ছাড়াই। ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে লুটপাটের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ার দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্ত রেজাউল করিম রিয়ান লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের স্থানীয় প্রতিনিধি। এছাড়াও সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে প্রায় ৩০ বছর পূর্বে পানির পাম্পটি স্থাপন করে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর। এরপর থেকে ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত এই পাম্পটি রক্ষণাবেক্ষন করেন লক্ষ্মীপুর পৌরসভা। শুরুতে কয়েক মাস প্রকল্পটির সুফল পায় পৌরবাসী। এরপর সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় বন্ধ হয়ে যায় পানি উত্তোলন। তবে পুনরায় সেটি সচল করার কোন উদ্যোগ নেয়নি পৌরসভা কিংবা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কিন্তু দুই রুম বিশিষ্ট ওই ভবনে বসবাস করতে জনস্বাস্থ্য অফিসের একজন কর্মচারী। গত ৩ বছর পূর্বে তিনিও ভবনটি ছেড়ে দেওয়ায় অরক্ষিত হয়ে পড়ে পাম্প ঘর। ১৫ দিন পূর্বে ওই ভবনটি দলবল নিয়ে ভেঙে নেয় অভিযুক্ত রিয়ান। এসময় লুট করা হয় ভিতরে থাকা পানির পাম্প ও পাইপসহ অন্যান্য মূল্যবান মালামাল। টেন্ডার কিংবা কোনরকম অনুমতি ছাড়াই কাজটি করেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পাম্পটি স্থাপন করা হয়েছিলো। কিন্তু কয়েক মাস না যেতে অদৃশ্য কারণে সেটি বন্ধ করে দেয় পৌরসভা। এরপর থেকে পাম্প ঘরটি আবাসিক হিসাবে ব্যবহার করা হতো।
জানা যায়, পাম্পের পিছনে আবুল হোসেন নামের এক ব্যাক্তি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। ওই বিল্ডিং এর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে পাম্প ঘরটি রিয়ান ভেঙে পেলে এবং কংক্রিটগুলো ওই বিল্ডিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়। ভবনের মালিক আবুল হোসেনের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তিনি কাজটি করেছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, কয়েক দিন পূর্বে লোকজনের মাধ্যমে ওই ঘরটি ভেঙে নিয়ে যায় এমপির স্থানীয় (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি রেজাউল করিম রিয়ান। এসময় বিল্ডিংয়ে থাকা পাম্প ও পাইপগুলোও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পৌরসভা কিংবা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি ছিল কিনা তা আমাদের জানা নেই।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, জেলা ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন পরিত্যক্ত পানির পাম্পটি ভেঙে নেওয়ার খবর শুনেনি। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পাম্প ঘর ভেঙে ফেলা ও লুটপাটের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে লক্ষ্মীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিলকিস আক্তার বলেন, পানির পাম্পটি স্থাপনের কিছুদিন পর সেটি পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর থেকে পাম্পটি সংরক্ষণের দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। বর্তমানে পানির পাম্পটি ভেঙে ফেলার ও লুটপাট করার বিষয়টি জানা নেই। আমরাও কাউকে ভাঙার অনুমতি কিংবা টেন্ডার দেয়নি। তবে যে বা যিনি কাজটি করেছেন তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
তবে অভিযোগের বিষয়ে রেজাউল করিম রিয়ান কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
চলবে…