আফতাব উদ্দিন আহমেদ, বয়স মাত্র (১৭)। এ বয়সে দশটা কিশোরের মতো পড়াশোনা করে (স্থানীয় একটি মাদরাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র) বড় হয়ে ‘কী হতে চাই’ স্বপ্নে বিভোর হওয়ার কথা। কিন্তু নিজের ডান পা খুইয়ে এখন সে বাড়ীতে- হাসপাতালের বিছানায় থাকতে হচ্ছে।
তবে নিজের দোষে নয়, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ডাক্তারের অবহেলায় মাদরাসা ছাত্র আফতাবের ডান পাটি হাটু থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। সম্প্রতি মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের উত্তর সোনাপুর গ্রামের নুরমিয়া কয়াল বাড়ীতে।
এঘটনায় সিভিলসার্জনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে বিচার না পাওয়ায় মানববন্ধনসহ উচ্চ আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থী আফতাবের অভিভাবক।।
রায়পুরের সোনাপুর গ্রামের অসহায় (আফতাবের মা) দিনমজুর স্বামীসহ দুই ছেলে নিয়ে অভাব-অনটনের সংসার কোনমতে চলছিল। আফতাব বর্তমানে সোনাপুর গ্রামের পাটোয়ারী রাস্তার মাথা নামক এলাকার রেয়ার মডেল মাদরাসার দশম শ্রেণির ছাত্র।
রায়পুরে নীজ বাড়ীতে চিকিত্সাধীন আফতাব জানায়, ১৭ মার্চ দুপুরে নীজেদর ঘরের পাশের পুকুরে কলাগাছ কাটার সময় হাত ফসকে দার আঘাত লাগে ডান পায়ের হাটুতে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরন হলে দ্রুত রায়পুর হাসপাতাল পরে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের অর্থপেডিকস ডাক্তার সাইফুল ইসলাম শরীফের কাছে চিকিৎসা যাই। তিনি এক্সরে বা কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং ভর্তি না করেই আফতাবের ভেঙে যাওয়া পায়ের অংশ শক্ত করে বেঁধে প্লাস্টার করে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেন। ১৯ মার্চ আফতাবের অবস্থা খারাপ হলে আবার হাসপাতাল নিয়ে আসলে পুঁজ হয়েছে বলে ব্যান্ডেজ করে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে হাঁটতে বলেন। পায়ের অবস্থা আরও খারাফ হওয়ায় ২১ মার্চ আবারও হাসপাতালে ডাক্তারের শরনাপন্ন হই। কিনৃতু ডাক্তার নার্স দিয়ে পা প্লাস্টার করে দেয়। কিন্তু অবস্থা আরও খারাফ হওয়ায় ২৩ মার্চ আবারও ডাক্তারের কাছে গেলে চিকিত্সা না দিয়ে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন।’
মাদরাসা ছাত্র আফতাব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ধানমন্ডি বাংলাদেশ মেডিকেল ও হাসপাতাল চিকিত্সকেরা অস্ত্রোপচার করে তার ডান পাটি হাটু থেকে কেটে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকার শ্যামলী সেবিকা জেনারেল হাসপাতালের অর্থপেডিকস ডাক্তার ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘ যখন আফতাবকে হাসপাতালে আনা হয়, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তার পায়ের ভাঙা অংশে গ্যাংগ্রিন হয়ে যায়। ফলে পা কেটে ফেলা ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। পাটি রেখে দিলে কিডনি বিকল হয়ে আফতাবের মৃত্যুও ঘটতে পারত।’
আফতাবের মা হোসনেয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, ‘পা ভেঙে যাওয়া খুবই সাধারণ দুর্ঘটনা। সঠিক চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হলে কিছুতেই আমার ছেলের পা কাটতে হতো না। সদর হাসপাতালের ডাক্তারের অবহেলার কারণে আমার ছেলেটার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল।’
আফতাবের মা হোসনেয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, ‘ছেলের এঘটনায় ডাক্তার শরীফের বিচার চেয়ে লক্ষ্মীপুরের সিভিলসার্জনসহ এসপি, ডিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। সিভিলসার্জন শরীফ সদর হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার অরুপ পাল, হাড় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মাহফুজ ও রায়পুর সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মকর্তা বাহারুল আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয় এবং সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোট দিতে নির্দেশনা দেয়া হয় কমিটিকে। কিন্তু তদন্ত কমিটি তা না করে দুই মাস পর অভিযুক্ত ডাক্তার শরীফের পক্ষেই তদন্ত রিপোট দেন।। আমিএঅবহেলার সাথে জড়িতদের শাস্তি চাই।’
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের সেই অভিযুক্ত ডাক্তার শরীফ হোসেন বলেন, ‘আমি আমি একজন সরকারি অর্থপেডিকস ডাক্তার। আফতাবের পা ভেঙে গেলে আমি সাধ্যমত চিকিৎসা করি। আমার কোন অবহেলা ছিলনা।
এবিষয়ে তদন্ত দলের প্রধান রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বাহারুল আলম বলেন, বিভন্ন কারনে তদন্ত রিপোট দিতে দেরি হয়েছে। আফতাবের পরিবার তদন্ত রিপোটে অসন্তোষ থাকলে তা অধিকতর তদন্ত করা ব্যাবস্থা রয়েছে। তারা সেটাও করতে পারে
লক্ষ্মীপুর সিভিলসার্জন আহাম্মদ হোসেন বলেন, রায়পুরের দুর্ঘটনার শিকার শিক্ষার্থী আফতাবের মা হোসনেয়ারা বেগম সদর হাসপাতালের সার্জারি চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম শরীফসহ দুইজনের বিরুদ্ধে গত ৩ এপ্রিল লিখিত অভিযোগ করেছেন। ডাক্তার শরীফের অবহেলা ছিলোনা বলে তদন্ত কমিটি রিপোট দিয়েছেন। আফতাবের পরিবার অসন্তোষ থাকলে অধিকতর তদন্ত করা হবে।