ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নতুন বছরে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও জোরদার হোক, সব সংকট দূরীভূত হোক, সব সংকীর্ণতা পরাভূত হোক এবং সবার জীবনে আসুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি—এই প্রার্থনা করি।
রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আজ আমরা যে সময়কে পেছনে ফেলে নতুন দিনের আলোয় উদ্ভাসিত হতে যাচ্ছি, সে সময়ের যাবতীয় অর্জন আমাদের সম্মুখ যাত্রার শক্তিশালী সোপান হিসেবে কাজ করছে। তাই নতুন বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরোহণের সোপান রচনা করার অনুপ্রেরণা।
আরও পড়ুন— ডিসি-এসপিকে বদলির হুমকি! স্বতন্ত্র প্রার্থী পবনকে তলব
২০২৩ সাল বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের এক স্বর্ণযুগ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০২২ সালের ২৫ জুন নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর সেতুতে রেল যোগাযোগের শুভ উদ্বোধন করেছি। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চালুর পর ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা সম্প্রসারণ করেছি।
অন্যান্য মেগা ও মাঝারি অবকাঠামোসহ সব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু করেছি। ৫ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ করেছি। ফলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং ১৯ অক্টোবর দেশের ৩৯টি জেলায় ১৫০টি সেতু এবং ১৪টি ওভারপাস একসঙ্গে উদ্বোধন করেছি। ২৮ অক্টোবর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছি। ১১ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেল চালু করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করে। আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে পরপর তিন দফা জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে গত ১৫ বছরে আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছি।
আরও পড়ুন— বরিশালে প্রধানমন্ত্রী, জনসভা শুরু
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও কিছুটা মন্থর হয়েছিল। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক অবরোধ ও পাল্টা অবরোধ সারা পৃথিবীতে নিরীহ মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এরইমধ্যে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছি। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই দেশের যেকোনও সংকট আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় করেছি। মিয়ানমারে গণহত্যা থেকে আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ৩৩টি জেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেছি। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে এসেছি। প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের ওষুধ দিচ্ছি। ২ কোটি ১০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দিয়েছি। ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি।
আরও পড়ুন— ময়মনসিংহ ও সুনামগঞ্জের ডিসিকে বদলি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট চারটি ক্যাটাগরিতে ১০ কোটি মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন চালু করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন ছাত্রছাত্রীদের হাতে বিনামূল্যে বই পৌঁছে দিচ্ছে। এই বই উৎসব বাংলাদেশে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের ক্ষেত্রেও এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টি করছি এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছি। ২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ ঘোষণা করেছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয় এবং জনগণের মঙ্গল হয়। কারণ, একমাত্র আওয়ামী লীগই স্বাধীনতার সুমহান আদর্শকে ধারণ করে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন আমরা মানুষের সার্বিক কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি, অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিহত করে মানুষের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করি এবং সর্বোপরি গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলি। সূত্র: বাসস।