ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে আমন ধান, সয়াবিনসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। গাছপালা ভেঙে লাইনও বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বিদ্যুৎ নেই উপজেলার বেশিরভাগ অঞ্চলে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের (১৬-১৭ নভেম্বর) ঝড়-তুফানে মেঘনার উপকূলীয় অঞ্চলের ৩টি ইউনিয়নসহ (উত্তর চরবংশী, দক্ষিন চরবংশী, উত্তর চরআবাবিল) দশটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার একর জমির আমন ধান ও সয়াবিনসহ কাঁচামরিচ, টমেটো, বেগুন, লাউসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। সব ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।।
আরও পড়ুন— বায়ুদূষণ রোধে আঞ্চলিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণঃ স্পিকার
শুক্রবার থেকে শনিবার (১৭-১৮ নভেম্বর) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সারাদিন বিদ্যুৎ ছিল না এ উপজেলায়। তবে বিকাল চারটায় পৌর শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও বেশিরভাগ এলাকা ছিল অন্ধকারে।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকাল ৫টার সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয় পৌরসভার কোনো কোনো এলাকায়। আর উপজেলার সবগুলো গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। চার্জ নেই মোবাইল ফোনে। এছাড়াও কোনো কোনো এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যস্ত হয়ে আছে। শহর ও পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। আর জেলাসহ পাঁচটি উপজেলা শহরসহ গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
আরও পড়ুন— শর্তহীন সংলাপের জন্য বিএনপিকে এক দফা ছাড়তে হবেঃ মেনন
পৌরসভার ৬নং নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাজেদ হোসেন, আরকান আলি সোহেল ও মিরাজ হোসেম বলেন, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার টানা প্রায় ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যুৎ আসে। শনিবার ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক শহরের কাঞ্চনপুর গ্রামের বাসিন্দা শহীদ পাটোয়ারী, দেনায়েতপুর এলাকার কামরুল হাসান রাসেল বলেন, শুক্রবার সারাদিন আমরা বিদ্যুৎ পাইনি। রাতেও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ছিলাম। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনে চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া অন্ধকারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। শনিবার বিকালও বিদ্যুৎ আসেনি।
দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন মোল্লা বলেন, চরাঞ্চলের আমন ধান ও সয়াবিনসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব ফসল পানির নিচে। আমাদের এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ আসেনি। মোবাইলে চার্জ দেওয়া নিয়ে বেকায়দায় আছি। কেরোয়া গ্রামের বাসিন্দা সফিক মিয়া বলেন, টানা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছি। কখন বিদ্যুৎসেবা পাব তারও নিশ্চয়তা নেই।
আরও পড়ুন— মদনে টাকার হিসাব চাওয়ায় প্রবাসীকে পুড়ি হত্যার চেষ্টা
রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম শাহাদাত হোসেন বলেন, ঝড়ে উপজেলার বিভিন্নস্থানে আমাদের একশটির বেশি খুঁটি পড়ে গেছে। গাছপালা পড়ে তিনশর বেশি স্পটে তার ছিঁড়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে ট্রান্সফরমারে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করতে আমাদের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। শনিবার রাতের মধ্যেই সব গ্রামে বিদ্যুত সরবরাহ দেয়ার চেষ্টা করছি।
রায়পুরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাহমিনা খাতুন বলেন, ঝড়ে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পানির নিচে আমন ধান ও সয়াবিন। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কৃষকদের সাথে কথা বলছে। ক্ষয়তির আর্থিক পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি!