প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক শ্রেণিকক্ষ, উন্নত পরিবেশ থাকলেও দুই বছর ধরে অধ্যক্ষ ও সহকারি অধ্যক্ষসহ শিক্ষক স্বল্পতা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর হামছাদি কাজিরদিঘিরপাড় আলিম মাদরাসার পাঠদান কার্যক্রম। দাখিল ও আলিম শ্রেণির তিন বিভাগের এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য ২৬টি কক্ষের প্রয়োজন হলেও আছে ১২টি। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের ২৫টি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৯ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯০০ সালের ১ জানুয়ারী রায়পুর উপজেলা বামনী ইউপির কাজিরদিঘির পাড় বাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে মাদরাসায় লেখাপড়ার মান ভালো ছিল। সময়ের ব্যবধানে শিক্ষার্থী বেড়ে যায়। এ অবস্থায় পুরাতন ভবন ভেঙে ফেলায় কক্ষের সংকট সৃষ্টি হয়। বর্তমানে কোনও কোনও শ্রেণিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আছে। মাদরাসায় দু’টি শাখা থাকলেও শ্রেণিকক্ষের অভাবে এক কক্ষে চলে পাঠদান। ফলে লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। কক্ষের অভাবে ভবনের টেবিল বেঞ্চসহ অন্যান্য ফার্নিচার রাখা নিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে।
আরও পড়ুন— তফসিলকে স্বাগত জানালেন ওবায়দুল কাদের
বামনীর সাইচা গ্রামের বাসিন্দা মুকুল পাটোয়ারী বলেন, ‘আমার এক আত্মীয়ের সন্তানকে ভর্তি করাতে এসে জানলাম বিদ্যালয়ে একডেমিক ভবন ও শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবু ভর্তি করিয়েছি। বিশিট সমাজ সেবক রোটারিয়ান রফিকুল হায়দার চৌধুরী একটি বহুতল ভবন করেও দিয়েছেন। আরও দুটি নতুন ভবন ও ৭ জন শুণ্য পদের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা জরুরি।’
ভবন ও শিক্ষক সংকটের কথা জানিয়ে রায়পুরের হামছাদি কাজিরদিঘির পাড় আলিম মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম সুলতান বলেন, ‘এবতেদায়ি, জেডিসি, দাখিল ও আলিম শাখা থাকলেও একই কক্ষে পাঠদান করায় শিক্ষার গুণগত মান রক্ষা হচ্ছে না। বহুদিন ধরে মাদরাসার সীমানাপ্রাচীর না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা। মাদরাসার কোন বড় মাঠও নেই। তবে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করলেও এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে তারা।’
আরও পড়ুন— আগুন দিয়ে যারা মানুষ মারে তাদের ছাড় নয়ঃ প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ‘অধ্যক্ষ নাই দুই বছর। সহকারি অধ্যক্ষ নাই এক বছর। ইংরেজিতে চার জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আছেন একজন। গণিতে ছয় শিক্ষকের পদ থাকলেও আছেন দুই জন। সামাজিক বিজ্ঞানে চার শিক্ষকের পদ থাকলেও নেই একজনও। ইসলাম শিক্ষায় চার শিক্ষকের পদ থাকলেও আছেন দুই জন। বিজ্ঞানে চার শিক্ষকের বদলে আছেন ১জন।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল হক বলেন, ‘হামছাদি কাজির দিঘিরপাড় আলিম মাদরাসাটি ফলাফলে সকলের চেয়ে ভালো। প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৭-৮ জন জিপিএ-৫ পেয়ে আসছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য নতুন ভবন খুবই জরুরি। উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি তুলে ধরবো।’
আরও পড়ুন— কাজী জাফরউল্লাহ আ.লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনজন দাশ বলেন, ‘মাদরাসাটিতে ভবন সংকটের কারণে পাঠদান বিঘ্ন হওয়ার বিষয়টি অধ্যক্ষ আমাকে জানিয়েছেন। নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও টুল-বেঞ্চ দেয়ার চেষ্টা চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সারা দেশে বহুতল ভবন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। কিন্তু নানান সমস্যার কারনে তা আর হয়নি।’
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের এমপি এডঃ নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ‘একাডেমিক ভবন সংকটসহ অন্যান্য সমস্যার কথা বলেছেন অধ্যক্ষ ও সভাপতি। স্বল্প সময়ে একটি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি।’