রিজার্ভ গেল কোথায়? অনেকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জনগণের সেবায় রিজার্ভের টাকা খরচ করেছি। ভ্যাকসিন কিনেছি। খাদ্য মন্দায় খাদ্য কিনেছি, এখনো কিনছি।’
শনিবার (১৪ অক্টোরব) রাজধানীর বিমাবন্দর এলাকার কাওলা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ দারিদ্রের হার ১৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। করোনায় ধনি দেশ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন দিয়েছে, আমরা দিয়েছি বিনামূল্যে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে, করেছি।
সরকার প্রধান বলেন, বিএনপির আমলে দেশ ছিল পিছিয়ে। আওয়ামী লীগের আমলে এগিয়ে গেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। খালেদা জিয়া আমলে ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। আর আমরা এবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ সেটা ধারণ করে এবং জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। আপনাদের এলাকাকে সিটি করপোরেশনের আওতায় এনেছি। কাজ করে যাচ্ছি। আজকে দেশের মানুষ ভূমি ও গৃহ পাচ্ছে। আমরা বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। বস্তিবাসীদেরও ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট দিচ্ছি। তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে। খালি বড়লোকরা ফ্ল্যাটে থাকবে, গরিবরা থাকবে না, এটা হতে পারে না।
আরও পড়ুন— খাদের কিনারা থেকে নিউজিল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জ দিল বাংলাদেশ
তিনি আরও বলেন, বিএনপির আমলের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের ফলে সব মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তাদের আন্দোলনে হাজার হাজার গাছ কেটেছে, রাস্তা কেটেছে। তারা ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। খুনিদের দল জনগণের কল্যাণ কখনো করতে পারে না। করেও না। একই দিনে ৬৪ জেলায় ৫০০ বোমা হামলা করলো। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে। নিজেরই তো শিক্ষা নেই, অন্যকে শিক্ষা দেবে কীভাবে? এসএসসিতে ফেল করেছে। পাস করেছে অংকে। কারণ টাকা-পয়সা হিসাব-নিকাশ ভালো জানতো।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি তার (খালেদা জিয়া) বিদেশে চিকিৎসার দাবি নিয়ে অনশন করে। তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছে? বাসা থেকে কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে, গিয়ে কী খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন? নাটক করার তো একটা সীমা থাকে। তারা অনশন করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে চায়, নেবেটা কে? যে ছেলে মাকে দেখতে আসে না। এমন আশা করাও দুরাশা।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এতই অসুস্থ। তিনি নাকি মারা যাবেন! হ্যাঁ বয়স হয়েছে, আবার অসুস্থ। কিন্তু এত অসুস্থ হলে তার ছেলে তাকে দেখতে আসে না কেন? এটা কেমন ছেলে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জিয়া বা খালেদা জিয়ার কোনো অবদান নেই। বরং তারা ভোটচুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের উন্নতি হয়, এটা আজকে আমরা প্রমাণ করেছি। গত ২৯ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের মানুষের জন্য কী করেছে? কিছুই করেনি। যা করেছে আওয়ামী লীগই করেছে।
জিয়ার সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এরা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা আর স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় বসানোর কাজ করেছে। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। এদের জন্ম হয়েছে হত্যার মধ্যদিয়ে। ষড়যন্ত্র করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার বাবার সঙ্গে দায়িত্বরত অফিসারদেরও হত্যা করেছে। জিয়া ও এরশাদের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। ওই অবৈধ দখলদারদের দোসর বিএনপি-জামায়াত আজ বাংলোদেশে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের উন্নতি সহ্য করে না।
আরও পড়ুন— মার্কিন পর্যবেক্ষক দলকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীঃ ভোট কারচুপির ইচ্ছা আমাদের নেই
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে ভোটচুরির অপরাধে খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে মাত্র দেড় মাসে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। জনগণের আন্দেোলনের মাধ্যমে আমরা এদেশের মানুষের ভোটার অধিকার নিশ্চিত করেছি। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার করেছি। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এদেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির সঞ্চালনায় এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা অংশ নেন।
এর আগে বেলা সোয়া ৩টার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীতে ক্ষমতাসীনদের জনসমাবেশে উপস্থিত হর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এসময় নেতাকর্মীরা তাকে স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানান। এসময় নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। এ জনসভা গত শনিবার হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তারিখ পরিবর্তন হয়। ফলে আজ কাওলায় হয় সমাবেশ।
এ উপলক্ষে এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন শাখা ও ইউনিট থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন কাওলা মাঠে। দুই ঘণ্টা আগেই জনসভার মাঠে প্রায় ভরে যায়। রোদের মধ্যে আশপাশের এলাকায় গাছের ছায়াও অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে, ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থীদের শোডাউন চোখে পড়েছে। প্রত্যেকেই তার অনুসারীদের টি-শার্ট ও ক্যাপ, ব্যানার ফেস্টুনসহ নানা সাজে সাজিয়ে মিছিল নিয়ে এসেছেন। সভাস্থলে প্রার্থীদের ছবি হাতে সমর্থন জানান দিতে দেখা গেছে।





