মা ইলিশ রক্ষায় আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা এক মাস পেছানোর দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরিশাল মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশন।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলুর নেতৃত্বে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
টুটুল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সহচর। গত এক দশক ধরে নগরের পোর্ট রোড মোকামে একক আধিপত্যের ব্যবসা করছেন। ভারতে ইলিশ রপ্তানিকারকদের মধ্যে শীর্ষ ব্যবসায়ীও এই টুটুল।
আরও পড়ুন- মৌসুমী সর্দি-জ্বর-কাশি প্রতিরোধে
নিষেধাজ্ঞা এক মাস পিছিয়ে ১২ নভেম্বর থেকে শুরু করার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে টুটুল বলেন, ‘ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা যাবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। অপরদিকে প্রজনন মৌসুমে প্রতি বছরের কর্মসূচি হিসেবে ১২ অক্টোবর থেকে ইলিশ নিধন ও পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হবে। তাছাড়া এ বছর মিঠা পানির নদীতে ইলিশ মিলছে না, সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা ইলিশ নিধনে সাগরে যেতে পারছেন না। যে কারণে মৌসুমের শুরু থেকেই বাজারে ইলিশ সংকট চলছে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা না করে জাটকা রক্ষায় জোর দেওয়া দরকার বলে তিনি জানান।’
মৎস্য ব্যবসায়ী টুটুল দাবি করেন, এ বছর বরিশাল থেকে ৪০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করেছেন। গত বছর রপ্তানি করা হয় ৩০০ টন।
জানতে চাইলে বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা না দেওয়া হলে ইলিশের ডিম আসবে কোথা থেকে। জাটকাই বা কীভাবে সৃষ্টি হবে? এখানে সরকারের বিশেষজ্ঞ দল বহু গবেষণা করে দেখেছে নির্দিষ্ট এ সময়ে মা ইলিশ নিধন বন্ধ রাখলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি হবে। এ বছর ইলিশ কম পাওয়ায় নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন- রাশিয়ার মুদ্রায় বাণিজ্যের ৩০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
এ প্রসঙ্গে জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, ‘গবেষকদের গবেষণা এবং জেলে সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর প্রতিবছর আশ্বিনে ইলিশ নিধনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। কেউ এটার বিরোধিতা করলেও এর সঙ্গে জেলে সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা নেই। সরকার এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, ব্যবসায়ীরা এটি না মানলে সরকারি কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।’
এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ রায় বলেছেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। এটি পেছনের সুযোগ নেই। মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা অবশ্য প্রয়োজন। কারণ বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ ধরনের দাবির কোনো প্রভাব মৎস্য অধিদপ্তরের মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে পড়বে না।’
এদিকে সোমবার দুপুরে মা ইলিশ রক্ষায় আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে বরিশালে টাস্কফোর্স কমিটির প্রস্তুতি সভা হয়েছে। জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই সভায় প্রশাসনসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ২২ দিন ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। দুষ্কৃতকারীরা যাতে ওই সময়ে মা ইলিশ আহরণ করতে না পারে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।