কুড়িগ্রামের উলিপুরে বর সহ বরের সাক্ষী ও কনের সাক্ষী সবাই ভুয়া। তবু বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। রেজিস্ট্রি আর মুন্সি দিয়ে ইসলামী শরা শরীয়াহ অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।কাজী বললেন আমি আইডি কার্ড নিয়েই বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছি আর বর ও সাক্ষী বললেন আমি ওই এলাকায় কোনো দিন যাইনি।
যৌতুক দাবীর অজুহাত তুলে আদালতে হওয়া মামলার নোটিশ পেয়ে এমন চাঞ্চল্য নিকাহ নামার কথা জানতে পারে রংপুর সদরের অভিরাম গ্রামের আতিকুল ও তার পরিবার।
জানা গেছে, উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের বড়ুয়া শেখপাড়া এলাকার সাহিদুল এর মেয়ে শাহিদা আক্তার দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকায় পোশাক কারখানায় কর্মরত। সেখানে থাকাবস্থায় নিলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার তারই এক সহকর্মীকে বিয়ে করেন। সেই সংসারের আছে ১৪/১৫ বছরের এক পুত্র সন্তান। পরে স্বামীর সাথে সংসার না টিকলেও সন্তান নিয়েই ঢাকায় কর্মরত।
আরও পড়ুন- ‘এখন বাঁচলে দুজনে বাঁচব, আর মরলে দুজনে মরব’
পোশাক কারখানায় চাকুরীর সুবাদে আতিকুলের সাথে পরিচয় ও কথাবার্তা চলে শাহিদার। এক পর্যায়ে কথা বন্ধ করে দেয় আতিকুল। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে শাহিদা বাড়িতে
এসে তার নিকটাত্মীয় পার্শ্ববর্তী গ্রামের আইয়ুব আলীর পুত্র সাহেদুল এর সহযোগীতায় একটি নিকাহ নামা করেন। নিকাহ নামায় বর হিসেবে আতিকুলের জাতীয় পরিচয় পত্র দেয়া হলেও তার ছবির স্থলে আরেক জনের ছবি সংযোজন করে কাজীর কাছে তাকে উপস্থিত দেখিয়ে কাবিন সম্পন্ন হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বরে কুড়িগ্রাম সদর থানার ৬ নং বেলগাছা ইউনিয়ন কাজী অফিসে ভুয়া বর আর স্বাক্ষীর সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে ওই নিকাহ নামা। পরে ৪ মাসের মাথায় যৌতুক দাবীর অজুহাত তুলে কুড়িগ্রামের আদালতে একটি মামলা করেন শাহিদা আক্তার। যার নং সি আর ১৪৯/২৩ (উলি)।
বরের উকিল বিহীন ওই নিকাহ নামার অনুলিপি এ প্রতিবেদকের কাছে আসলে সরেজমিন গিয়ে কথা হয়, কনে কতৃর্ক নিযুক্ত উকিল নুর বক্তের সাথে, তিনি জানান, আমিতো সবাইকে চিনি না। শুধু আমার রিক্সায় গেছে আর আমার সম্পর্কীয় ভাতিজি হয় বলে আমি উকিল নিযুক্ত হয়েছি। এ ছাড়া আর কিছু জানি না।
আরও পড়ুন- ২ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বদলীতে উলিপুরে মিষ্টি বিতরণ
কনের উকিলের সাক্ষী জসিম রহমানের বাড়িতে গিয়ে তার পিতা লুৎফর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, জসিম দীর্ঘ ৫ বছর ধরে বাড়িতে আসে না। আর কুড়িগ্রাম আসার তো প্রশ্নই আসে না। স্থানীয় কয়েক জনের সাথে কথা হলে তারাও একই কথা বলেন।
আরেক সাক্ষী উপজেলার উত্তর সাদুল্ল্যা গ্রামের সাজু মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, ‘আমি রংপুরে আছি সাক্ষাতে কথা হবে।’
বিবাহের ২য় সাক্ষী চিলমারী উপজেলার বান্দার ঘাট এলাকার গোলাপ উদ্দিনের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক হলেও তার নাম দেখানো হয় আবু মিয়া। প্রতিবেদক তার সঙ্গে কথা বলতে ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজ খবর নিতেই সেখানে উপস্থিত হয় ১ম সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম। সেখানে কথা হয় নিকাহ নামার দু’জন সাক্ষীর সাথেই।
আরও পড়ুন- লঙ্কানদের বিধ্বস্ত করে চ্যাম্পিয়ন ভারত
আবু বক্কর সিদ্দিক (আবু মিয়া) জানান, আমি বিয়ের সাক্ষী-তো দুরের কথা বিয়ে সম্পর্কেই জানি না। আর আমার স্বাক্ষরও দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এসময় বক্কর সিদ্দিক’র (আবু মিয়া) মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ১ম সাক্ষী সাহেদুল বলেন, ‘ভাই এসব নিয়ে নাড়াচাড়া করার দরকার নাই। আদালতে মামলা হয়েছে সেখানে সমাধান হবে।’
এক পর্যায়ে সংবাদ প্রচার না করার পথও বের করার চেষ্টা করেন সাহেদুল।
নিকাহ নামা সম্পাদনকারী কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার এখানে সবাই আসার পর নিকাহ নামা রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এর বাইরে আমার বলার কিছু নেই।’