লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে উত্তর চরবংশি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামকে শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে মেঘনা নদী। যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য এসব গ্রামের অধিকাংশ মানুষের ভরসা দুই কিলোমিটার অবস্থিত বাঁশের ১০টি বাঁশের সাঁকো।
উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট থেকে সুইজ গেইট পর্যন্ত সড়কের নাইয়াপাড়া এলাকায় ও চরকাছিয়া থেকে বেরিবাঁধ পর্যন্ত সড়কের নতুন ব্রীজ এলাকায় এবং মধ্য চরকাছিয়া থেকে মেঘনারচর পর্যন্ত সড়কের এলাকায় মেঘনা নদীর সংযোগ খালের ওপর ১০টি বাঁশের সাঁকো আছে। ৩ ফুট প্রশস্ত ও ১’শ ফুট থেকে আড়াই’শ ফুট দীর্ঘ এসব সাঁকো নির্মাণে ব্যয় হয় অন্তত ৫ লাখ টাকা। নদীর দুই কিলোমিটারে ১০টি সাঁকোর অবস্থান।
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সূত্রে জানাযায়, বর্ষার সময় চরকাছিয়া, নাইয়াপাড়া, চরজালিয়া, ফিসারিঘাট, পুর্বচরবংশি, নতুনব্রীজ, বটতলি, হাজিমারা, চমকাবাজার, মালেকখাঁ ব্রীজ, চরইন্দুরিয়া, মাষ্টারঘাট, তালতলা, মিনাফকি মোড়, পুরানভেড়ি ও ফিশারিঘাটসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ নৌকায় নদী পারাপার হয়।
আরও পড়ুন- সংযোগ সড়ক না থাকায় বাঁশের মই লাগিয়ে পারাপার
জেলে দাদন মিয়া খালাশি ও আনোয়ার মিয়া বলেন, নৌকায় ও ট্রলারে করে পণ্য পরিবহনসহ ছোট যানবাহন (ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল) ও রিকশা চলাচলে সমস্যার কারণে প্রতিবছর বর্ষার পর অগ্রহায়ণ মাসে সাঁকো নির্মাণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্ষা শুরু হলে জ্যৈষ্ঠ মাস নাগাদ পানির তোড়ে ওই সব সাঁকো ভেসে যায়। তখন সেসব স্থানে আবার খেয়া পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়। বছরের পর বছর সাঁকোর পেছনে গ্রামবাসীদের সংগ্রহ করা মোটা অঙ্কের অর্থ অপচয় হচ্ছে।
মেঘনা নদীর ৩০০ গজ পরেই বেরিবাঁধ সড়কে খাসেরহাট পর্যন্ত এলাকায় উচ্চবিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২’শ গজ দূরেই মেঘনা নদীর সংযোগ খালের ওপর ১০টি বাঁশের সাঁকো।
চরবংশী জনতা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র আরিফুল ইসলাম, সোহাগ হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তাদের বিদ্যালয়সহ তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী আছে। নদীর ওপর পাকা সেতু না থাকায় তাদের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পার অথবা সাঁকো পার হতে হয়। বর্ষায় স্কুল ছুটির পর অনেক শিক্ষার্থী পার হওয়ার জন্য খেয়াঘাটে আসে। ছোট নৌকার কারণে তারা একসঙ্গে পার হতে পারে না। এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে ঘাটেই অপেক্ষা করতে হয় তাদের। অনেক সময় শিশু ও বয়োবৃ্দ্ধ মানুষ নদীতে পড়ে যায়।
আরও পড়ুন- শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের প্রেস ব্রিফিং
বেরিবাঁধের ব্যবসায়ী সাইফুল বলেন, ‘চরাঞ্চল এলাকার বাসিন্দা হয়েও সেতুর অভাবে বাজারের ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।’
চরকাছিয়া গ্রামের কৃষক সাকিল মিয়া বলেন, ‘কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য কাছের হাট হচ্ছে খাসেরহাট বাজার। বাঁশের সাঁকো আর নৌকা দিয়ে এসব পণ্য পার করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়, তেমনি খরচও বেশি হয়।’
উত্তর চরবংশী ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন ও জাহাঙ্গির আলম বলেন, মেঘনা নদী সংলগ্ন বেরিবাঁধের দুইপাশের বসবাস করা ৫ হাজার পরিবারে ভোগান্তির কারণ বাঁশের সাঁকো আর খেয়া। এরপরও নদী ও খালের ওপর সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেউ। সাঁকো নির্মাণে প্রতিবছর অন্তত ১০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। এ পর্যন্ত সাঁকো নির্মাণ বাবদ যে টাকা অপচয় হয়েছে, তা দিয়ে কয়েকটি সেতু নির্মাণ করা যেত।
আরও পড়ুন- উল্লাপাড়ায় যুবলীগের মানববন্ধন
উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ‘মেঘনা নদীর সংযোগ খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য গত ১৫ বছর ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। দেড় বছর আগে এলজিইডি দপ্তর থেকে একটি সেতু নির্মাণের বরাদ্ধ হয়, কিন্তু কয়েক জেলে পরিবারের বাধার কারনে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।’
রায়পুর উপজেলা এলজিইডি সহকারি কর্মকর্তা সুমন মন্সি বলেন, ‘মেঘনা নদীর বেরিবাঁধের পাশে সংযোগ খালে ১০টি সাঁকোর জায়গায় দুই বছর আগে সেতু নির্মাণ করতে গেলে স্থানীয় জেলেরা তাদের বড় নৌকা যাতায়াতে বাঁধা সৃষ্টি হবে জানিয়ে এ কাজে বাধা দেয়। তাই আর এ কাজ করা হয়নি। এখানে উঁচু ও বড় সেতু নির্মাণ করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা এলজিইডির ঢাকা কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি।