বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তন করে নাম রাখা হচ্ছে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’। এ আইনে মানহানির মামলায় সাংবাদিকদের কারাদণ্ডের বিধান থাকবে না। তবে থাকছে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। অনাদায়ে ৩ বা ৬ মাসের কারাদণ্ড। এ সাজা কেবল জরিমানা না দিতে পারলেই ভোগ করতে হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সোমবার (৭ আগস্ট) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয়ারকালে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ আইনের বহু ধারা সাইবার নিরাপত্তা আইনে যুক্ত করা হবে। কিছু ধারায় বড় সংশোধনী আনা হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে মানহানির অভিযোগে কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান ছিল। নতুন আইনে পরিবর্তন এনে কারাদণ্ডের পরিবর্তে জরিমানার বিধান করা হবে। ২৯ ধারায় সাজা ছিল কারাদণ্ড। সেটাকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হচ্ছে। এখানে শুধু শাস্তি হবে জরিমানা। অনাদায়ে হয় ৩ মাস না হয় ৬ মাসের কারাদণ্ড থাকবে।’
জরিমানার পরিমাণ কত জানতে চাইলে মন্ত্রী জানান, ‘২৫ লাখ টাকা।’
একজন সাংবাদিক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আগে কারাদণ্ড ছিল এ ধারায়। কারাদণ্ড উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু সাজা রাখা হয়েছে। দেওয়ানি আইনে যদি মানুষ ক্ষতিপূরণ চায় তাহলে আমাদের যে আইন রয়েছে তাতে ক্ষতিপূরণের লিমিট নেই। আমি প্রশ্নের জবাবটা দিয়ে দিচ্ছি। ১০০ কোটি টাকাও ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। সেসব ক্যালকুলেশন করে অনধিক ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে ১ টাকাও জরিমানা হতে পারে, ২৫ লাখও হতে পারে।’
আরও পড়ুন- বাতিল নয়, সংশোধন হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এখন কোনো কারাদণ্ড নেই (খসড়া আইনে)। আপনাদের (সাংবাদিকদের) অ্যারেস্ট করবে কেন? অ্যারেস্ট তো করার আর কোনো সম্ভাবনাই থাকল না।’
সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বদলে সরকার এখন ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩’ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মানহানির বিচার করা হয়। এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করেন, তার জন্য তিনি অনধিক তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কারাদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। নতুন আইনে কারাদণ্ড বাদ দিয়ে জরিমানার সীমা ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
২০১৮ সালে প্রণীত বিতর্কিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ বাতিলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে। বিশেষ করে এর ৫৭ ধারা দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার সমুন্নত রাখা, সর্বোপরি মানুষের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিতে আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।