লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনায় নিষিদ্ধ ‘ম্যাজিক চাই’ দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছেন অসাধু জেলেরা। এ চাই ব্যবহার করার কারণে মেঘনায় দেশীয় ও বিরল প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনাও ধরা পড়ছে। ফলে দিন দিন নদী থেকে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ বিলীনহয়ে যাচ্ছে!
‘ম্যাজিক চাই’ নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের চেয়েও ভয়ংকর। প্রায় ৮ মিলিমিটার রড দিয়ে ৪০০ মিলিমিটার রাউন্ড বা স্কয়ার রিং পরিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চোরাই পথে এনে তা বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছেন। একেকটি চাই ১০ থেকে ১৫ ফুট চওড়া। লম্বায় ৮০ থেকে ৯০ ফুট। বাঁশের খুঁটিতে এ ‘ম্যাজিক চাই’ বাঁধা হয়। পানির তলদেশে মাটির সঙ্গে একটু পর পর ইটের সঙ্গে বেঁধে নদীতে ফেলে রাখা হয়। ফলে শুধু বড় মাছ নয়, মাছের রেণু পোনাও এতে আটকা পড়ছে!
শনিবার (৫ আগস্ট) সরেজমিন দক্ষিণ চরবংশী ইউপির মিয়ারহাট ও রাহুলঘাট এলাকায় (মেঘনা নদীর পূর্ব পাড়) গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য মাছ ধরার নৌকা। প্রতিটি নৌকায় ‘ম্যাজিক চাই’ দেখা গেছে।
আরও পড়ুন- ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৭৫৭
এ ব্যাপারে সিদ্দিক মাঝি ও আবিদ আলি নামের দুই জেলে বলেন, প্রতিদিন রাতে ম্যাজিক চাইগুলো পাতা হয় ও খুব সকালে ম্যাজিক চাই থেকে মাছ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি। অল্প সময়ে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ চাইয়ে ধরা পড়ায় এ চাইয়ের নাম দেওয়া হয় ‘ম্যাজিক চাই’। মেঘনা নদী পাড়ের প্রায় শতাধিক পরিবার ‘ম্যাজিক চাই’ দিয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করি। মাছের পোনাও ৫ টাকা দামে বিক্রিও করি। কেউ কিছুই বলেনা।
জেলেরা জানায়, উপজেলার উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ও উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড়ে মিয়ার হাটের রাহুল ঘাট, সাজু মোল্লার ঘাট, পানির ঘাট, চান্দার খাল, পুরান বেড়ির মাথা, মাস্টার ঘাট ও বায়রা ঘাটে বৃষ্টি ও বর্ষার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী এবং নদীর পাড়ে, খাল-বিলে পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ (কই, শিং, মাগুর, পুঁটি, চাঁদা, খলসি, টাকি) ইত্যাদি। খুব সহজে বেশি মাছ ধরার এই জাল ব্যবহারে ভবিষ্যতে দেশীয় প্রজাতির মাছ অস্তিত্বের সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এই জালে গিঁটগুলোর যে দূরত্ব, তাতে এটি দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ জালের আওতায় পড়ে। নিষিদ্ধ জালের তালিকায় নাম না থাকার সুযোগ নিয়েই অবাধে চায়না চাই জাল ব্যবহার হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে একে ‘ম্যাজিক জাল’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন- মাধবপুরে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উৎযাপন
দক্ষিন চরবংশি ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরায়েজি জানান, জেলেদের ভয়ংকর ম্যাজিক চাই দিয়ে মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু কে শুনে কার কথা- এই অবস্থা আরকি।
রায়পুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ এমদাদুল হক বলেন, “ম্যাজিক চাই’ দেশে ব্যবহার নিষিদ্ধ। ফলে মৎস্য আইন অনুযায়ী এই জাল দিয়ে মাছ শিকার করলে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। সম্প্রতি অভিযান পরিচালনা চালিয়ে ৭৬ টি জাল বিনষ্ট করেছি। ‘চায়না চাই জাল’ এর ব্যবহার ঠেকাতে সেই আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। ‘চায়না দুয়ারি’ জালের ব্যবহার বন্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”