সারাদেশে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের পরীক্ষামূলকভাবে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। রাজধানীর ২১টি টিকা কেন্দ্রসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকা মিলিয়ে মোট ১৮৬টি কেন্দ্রে এ টিকাদান কর্যক্রম চলছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রাজধানীর নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন।
শিক্ষার্থীরা অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে টিকা নিতে পারবে। শিশুদের এ টিকা কার্যক্রমের প্রথম ১২ দিন স্কুলে এবং পরবর্তী দুদিন স্কুলের বাইরে বিভিন্ন বুথ টিকা দেওয়া হবে। স্কুলপড়ুয়া এবং বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।এছাড়াও পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। তবে বুথে এসে রেজিস্ট্রেশন করেও টিকা নেওয়ার সুযোগ থাকছে।
টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন বলেন, দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের ১৮৬টি কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার পরীক্ষামূলকভাবে ৫-১১ বছর বয়সী শিশুদের করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ২১টি কেন্দ্রে শিশুদের টিকা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদেরও করোনা টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এখনো করোনার টিকা দিতে পারেনি। সে দিক থেকে আমরা টিকা কার্যক্রমে সফল। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে। শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই শিশুদের করোনা টিকার আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়াও টিকা নেওয়ার পর শিশুদের স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গেই ইমার্জেন্সি মেডিকেল টিম সেবা দেবে। তবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম বলেও জানান তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শুরুর দিনে রাজধানীর টিকাকেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকেই শিশু ও তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এতে টিকাদান ব্যবস্থাপনায় কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অনেকটা হুড়োহুড়ি করেই কেন্দ্রে প্রবেশ করছেন। শিশু স্কাউটের সদস্য ও শিক্ষকরা চেষ্টা করছেন কেন্দ্রের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে। কেন্দ্রগুলোতে একজন মেডিকেল কর্মকর্তা ও দুজন স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন। শিক্ষার্থী উপস্থিতি বেশি হওয়ায় তাদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অসহনীয় গরম আর প্রখর রোদে মানুষের জটলায় শিশুরা অসুস্থ হতে পারে, এমন আশঙ্কা অভিভাবকদের।
মহাখালী আবদুল হামিদ দর্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহীনা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষার্থী আছে। টিকা নিতে এসেছে প্রায় ৮০০ জন। এ ছাড়া আমাদের স্কুলে টিকাকেন্দ্র হবে, এটিও হঠাৎ করেই জানানো হয়েছে। দুটি ক্লাসরুম টিকাদানের জন্য প্রস্তুত করলেও একটি রুমেই সবাইকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এতে কিছুটা জটলা তৈরি হচ্ছে। শিক্ষকরা সুশৃঙ্খলভাবে শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. রাফি জানান, আমাদের স্টাফ কম, কেন্দ্রে সেচ্ছাসেবী ও কর্মী কম। ক্যাডেটরাও শিশু। এতে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ শিশুর সঙ্গে দুজন করে অভিভাবক আসছেন। অভিভাবকদের কারণেও কেন্দ্রে বাড়তি জটলা মনে হচ্ছে। যদিও বলা হচ্ছে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আছে, তবে সবাই এখনো নিবন্ধন করেনি। টিকার নিবন্ধনের ভিত্তিতে দৈনিক গড়ে ৩০০ ডোজ টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রে ধারনার চেয়েও বেশি শিশু টিকা নিতে এসেছে। আমরা সবাইকে টিকা দিতে পারবো। সেজন্য অতিরিক্ত টিকার চাহিদা দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে কিছুটা সময় বেশি লাগবে।
তিনি আরও জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) হয়তো ৩৫০ জনের মতো নিবন্ধিত শিশু টিকা পাবে। এ ছাড়া অনেকের নামের ক্ষেত্রেও ভুল আছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করতেও সময় লাগছে।
জানা গেছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর সবকিছু ঠিক থাকলে আগস্টের শেষ সপ্তাহে এ বয়সী শিশুদের দেশে গণহারে টিকাদান শুরু হতে পারে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোরশেদ আলম জানান, ১১ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে পরীক্ষামূলক শিশুদের করোনা টিকা কার্যক্রম। এরপর সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় ২৫ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম রাউন্ডের টিকাদান চলবে। এর দুমাস পর টিকার দ্বিতীয় রাউন্ড শুরু হবে। ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রেবিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি ফাইজারের টিকা ব্যবহার করা হবে।
বাংলাদেশে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের করোনা থেকে সুরক্ষায় ফাইজারের আরও ১৫ লাখ ডোজ করোনা টিকা সম্প্রতি অনুদান হিসেবে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফাইজারের টিকার ১৫ লাখ ২ হাজার ৪০০ ডোজ দেশে আসে গত ৩০ জুলাই। গত এপ্রিলেই ৫ থেকে ১১ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। দেশে এ বয়সী প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ শিশু রয়েছে।