কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী নিজে বললেই কাজে যোগ দিবেন চা শ্রমিকরা। এমটিই জানিয়েছে চুনারুঘাটের ২৪টি বাগানের চা শ্রমিকরা। ব্যার্থ করে দিয়ে দিয়েছে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দিনভর চেষ্টাও।
আজ বুধবার উপজেলা হলরুমে বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৪টি বাগানের পঞ্চায়েতদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসন।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আগামী দুর্গাপুজার আগেই আপনাদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং আপনাদের মজুরির বিষয়ে একটি ঘোষণা দিবেন বলে জানিয়ে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আপনারা কাজে যোগদান করুন।
শ্রমিকরা তাদের মজুরি ৩০০ টাকায় অনড় থেকে জেলা প্রশাসকের কথায় তারা কোনো সাড়া দেয়নি। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা মা বলি। আমাদের মা যদি ভিডিও বার্তা বা অন্য কোনো মাধ্যমে নিজের মুখে আমাদেরকে কাজে ফিরে যেতে বলেন, তাহলে আমরা কাজে ফিরে যাব।
শ্রমিকরা কাউকে বিশ্বাস করতে চাইছে না। শ্রমিকরা বলছে, প্রধানমন্ত্রীর কথা বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তাদের কাজে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি ৩ দিন ধরে শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে দূরে রয়েছেন এবং সাধারণ শ্রমিকদের ভার্চুয়ালি কাজে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু শ্রমিকরা এতেও সাড়া দেয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিকের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিন্টু চৌধুরী, পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈলেন চাকমা, এনএসআই হবিগঞ্জের উপ পরিচালক মো. আজমল হোসেন, ডিজিএফআই জেলা প্রধান মো. হুমায়ুন কবির, মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম, লস্করপুর ভ্যালি সভাপতি রবীন্দ্র গৌড়, সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ বাড়াইকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পঞ্চায়েত প্রধানরা।
এর আগে সোমবার ও মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক বাগান শ্রমিক ও পঞ্চায়েতদের নিয়ে বৈঠক করার পরও শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেনি। মঙ্গলবার বিকালে বাগান পঞ্চায়েতদের নিয়ে আলোচনার পর শ্রমিকদের একাংশ কাজে যোগদানের কথা বলেও বুধবার কোনো বাগানের শ্রমিকরা কাজে যায়নি। বুধবার সকাল থেকে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা।
দাড়াগাঁও বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি প্রেমলাল আহির বলেন, আমাদেরকে মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে লেবার হাউজে ডাকা হয়েছিল। আমরা সেখানে জানিয়ে দিয়েছি যে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে। তবে আমরা রাস্তা অবরোধ না করে নিজ নিজ বাগানে আন্দোলন করবো বলেছি।
তিনি বলেন, এখন আন্দোলন আর নেতাদের হাতে নেই। এটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন সাধারণ শ্রমিকরা। আমরা মনে করছি প্রধানমন্ত্রী যেহেতু কোনো ভিডিও প্রকাশ করে বলেননি তবে তার নাম বিক্রি করে হয়তো কেউ প্রতারণা করছেন। প্রধানমন্ত্রী যদি নিজে আমাদের বলেন তাহলে ১২০ টাকা মজুরিতেই আমরা কাজে যোগ দেব।
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে দুই ঘণ্টা এবং ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন চা শ্রমিকরা। মজুরি বাড়ানোর জন্য বাগান মালিক, মজুরি বোর্ড, চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে ঢাকা ও শ্রীমঙ্গলে কয়েক দফা বৈঠক হয়। এতে দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।