বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এখন আর কথা বলার সময় নেই। কাজ একটাই- লুটেরা, ফ্যাসিস্ট, যারা আমাদের সব অর্জন কেড়ে নিয়েছে তাদের বিদায় চাই।’
বুধবার (১২ জুলাই) নয়াপল্টনে সরকার পতনের লক্ষ্যে এক দফার ঘোষণা দেওয়ার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন চাই। অবশ্যই নির্বাচন চাই। কিন্তু আপনাদের শেয়ালের মতো নির্বাচন চাই না। ২০১৪ সালে শেয়ালের মতো খেয়েছেন। ২০১৮ সালে খেয়েছেন। এখন আবার নতুন করে একই কায়দায় নির্বাচন করতে চান। কিন্তু যখন সুনামি হয় তখন কি ঠেকিয়ে রাখা যায়? প্রতিবাদের সুনামি শুরু হয়েছে। মাত্র দুইদিনের নোটিশ। সয়লাব হয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেছে এটাও বানচাল করার। আমাদের অনেককে বাধা দিয়েছে। ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। তরুণরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে এসেছে। একটাই আশা পরিবর্তন চায়।’
সরকারের পতন দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা এর শেষ চাই। এই সরকার দেশ-গণবিরোধী, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী সরকার।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে না পারায় আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপি নেতা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় মনে হয়, আমরা যেন কারও দাস। এদের দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের সমাধান করতে হবে।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে দায়ী করে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন, যখন দায়িত্বে ছিলেন না তখন ১৬ মাস পরে এসে রায় লিখেছেন। তার ষড়যন্ত্রের কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছে। তারা এখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করছে। আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচন দেখেছি। ২০১৮ সালের নির্বাচন দেখেছি। আগের রাতে ভোট করেছে। পুরো রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে আগের রাতে ভোট করেছে।
আরও পড়ুন- বয়স ৩০ পেরোলে নারীর প্রজননক্ষমতা ৫০ শতাংশ কমে যায়
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে যে নিরপেক্ষ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা রক্ষা করুন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের অনেক নেতারা এখন দিনক্ষণ গুণছে, আমান উল্লাহ আমানদের মতো কবে সাজা হবে। সবার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দেওয়া হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেছে। স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় রেখে অসুস্থ করা হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা আমলে নেননি। কারণ তিনি মনে করেন বেগম খালেদা জিয়া হলেন সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। তাকে যদি কারাগারে বন্দি করে রাখা যায় তাহলে তার নিষ্কণ্টকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে।BNPকিন্তু দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না উল্লেখ করে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, কারণ সরকারের চুরি-ডাকাতি নিয়ে বলতে গেলে সারাদিন বলা যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আর সংসদ একটা আছে, যেখানে জনগণের কোনো কথা বলা যায় না।
মির্জা ফখরুল বলেন, কৃষক, রিকশা শ্রমিক, নিম্নআয়ের মানুষ বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করতে পারছে না। অথচ তারা ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা বলেছিল। আমাদের কৃষকদের বিনামূল্যে সার দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সেই সারের দাম কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল। চাকরি হয়েছে? হ্যাঁ তাদের লোকদের চাকরি দিয়েছে। সেখানেও ২৫ লাখ পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়। অথচ তারা কি বলে- উন্নয়নশীল দেশে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বাড়বেই। মানুষ খেয়েদেয়ে খুব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। কয়েকদিন আগে তারা বলেছে- আমাদের এখানেই ভালো নির্বাচন হয়, আওয়ামী লীগের অধীনে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরাকে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, একটা নাবালক মেয়ের এই অবস্থা, এটা দেখে বুক ফেটে গিয়েছে। আমরা তো এমন দেশ চাইনি। উচ্চ আদালত থেকে তার জামিন আদেশ স্থগিত করে রাখা হয়েছে। এই হচ্ছে অবস্থা।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, এনাফ ইজ এনাফ। তোমরা সবকিছু ধ্বংস করেছো। অর্থনীতি, গণতন্ত্র সব ধ্বংস করেছো। ব্যাংক লুট করেছো। টাকা পাচার করেছো। কি চমৎকার আইন করেছো! পাচার করা টাকা ফেরত আনলে তো কোনো প্রশ্ন করা হবেই না, বরং বোনাস দেওয়া হবে।