স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ আমাদের বাংলাদেশ। স্বাধীন জাতি আমরা। যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেই আমরা আমাদের দেশ পেয়েছি। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ সহ্য না করার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কারো খবরদারির কাছে নতজানু হব না। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।
রবিবার (১৮ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ দরবারে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। জাতির পিতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি দিয়ে গেছেন— সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতি অনুসরণ করে চলছি এবং যার ফলে আমরা আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা দরকার এবং যা যা করা দরকার আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। আর সেই সঙ্গে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও একটা সুসম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
জাতির পিতার ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে নৌবাহিনী দিবস উপলক্ষে দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা শান্তিকামী জাতি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু আত্মরক্ষা করার মতো ক্ষমতাও আমাদের থাকা দরকার।”
আরও পড়ুন- কোটি নাগরিকের এনআইডির মেয়াদ শেষ, ফের নিতে হবে
শেখ হাসিনা বলেন, ওই একই ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আরও বলেছিলেন, “যে জাতি নিজেকে সম্মান করতে পারে না, আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে পারে না, সে জাতি দুনিয়ায় কোনোদিন বড় হতে পারে না। সে জন্য আজকে আমরা আত্মমর্যাদাবিশিষ্ট জাতি হিসেবে, আত্মমর্যাদা নিয়ে বাস করতে চাই। আমরা অন্য কারও ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না, অন্য কেউ আমাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক তাও আমরা সহ্য করবো না। আমরা এই নীতিতেই বিশ্বাসী।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তিকামী জাতি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই; কিন্তু আত্মরক্ষা করার মতো ক্ষমতাও আমাদের থাকা দরকার। আমরা সেটিই বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন বলেন, আশা করি এই কথাগুলো আমাদের সকলেই মনে রাখবেন। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ আমাদের। যুদ্ধে বিজয় অর্জন করে আমরা আমাদের দেশ পেয়েছি। কারো খবরদারির কাছে নতজানু আমরা হবো না। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিসহ দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সন্ত্রাসবাদের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমি জানি। তা ছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহার আজকে যেমন আমাদের স্বপ্ন দুয়ার খুলে দিয়েছে সেই সঙ্গে সঙ্গে অনেক শঙ্কাও সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। প্রযুক্তি এক ধরনের কার্যক্রমে নতুনভাবে এই আশঙ্কা বা নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমাদের এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমরা সেটাই বিশ্বাস করি।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেক বাধা, অনেক ষড়যন্ত্র হবে। বারবার বাধা এসেছে কিন্তু সেগুলো অতিক্রম করেই আমরা বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই এখনো অনেক বাধা, অনেক চক্রান্ত আছে। একটি দেশ যখন এত দ্রুত অগ্রগতি লাভ করে সেটি অনেকেই হয়তো সহ্য করতে পারে না। সে জন্য নানা ধরনের উৎপাত শুরু করে। সেগুলো নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সব সময় আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। আত্মমর্যাদা বোধ নিয়ে চলতে হবে। স্বাধীন জাতি আমরা, বিজয়ী জাতি আমরা। বিজয়ী হিসেবে মাথা উঁচু করে বিশ্বদরবারে আমরা চলব। এই কথাটা মনে রেখে আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বের সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাংলাদেশের। যে পররাষ্ট্র নীতি জাতির পিতা দিয়ে গেছেন সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতি অনুসরণ করে চলছি।