চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত বদলে ফের ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট ভ্যালির চা শ্রমিকরা। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (২১ আগস্ট) বেলা ১১টায় সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নেন তারা। শ্রমিকরা সড়কে বসে পড়ায় বিমানযাত্রীসহ ওই সড়কে যাতায়াত করা শত শত যানবাহন আটকা পড়ে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
সারা দেশে ১৬৭টি চা-বাগানে শ্রমিকদের আন্দোলনের অষ্টম দিনে শনিবার (২০ আগস্ট) বিকেলে শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠকের পর দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর পরই ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল। কিন্তু মজুরি বৃদ্ধিকে অপর্যাপ্ত দাবি করে রাতেই হাজারো চা-শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
নিপেন পাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর বিভিন্ন চা-বাগান থেকে পঞ্চায়েত কমিটি ও ভ্যালি কমিটির নেতারা আমাদের ফোন দিয়ে জানান, ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নেবেন না জানিয়ে শ্রমিকরা বাগানে বাগানে আন্দোলন শুরু করেছেন। শ্রমিকরা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। তাই আমরা শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।
চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সভাপতি রিতেশ মোদী বলেন, সাধারণ শ্রমিকরা সমঝোতা মানছেন না। তারা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে অনড়। তাই শনিবার মধ্যরাতে ভিডি বার্তায় আন্দোলন অব্যহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করিনি।
আজ রোববার খালি গায়ে রং দিয়ে ‘মজুরি ৩০০ টাকা চাই’, ‘প্রতারণার চুক্তি মানি না মানব না’, ‘এবারের সংগ্রাম চলবেই’ লিখে রাজপথে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। নগরের উপকণ্ঠ লাক্কাতুড়া চা বাগান সংলগ্ন এলাকার ওসমানী বিমানবন্দরের সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। এ সময় প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় আন্দোলনের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে সিলেট আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী শ্রমিকদের মজুরির ব্যাপারে আশ্বাস দেন। পরে একদিনের আল্টিমেটাম দিয়ে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন চা-শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা জানান, আমরা দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছি। ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে আমাদের পোষায় না। আমরা সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করে ৬-৭শ টাকা পাই। এ দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। এক কেজি চালের দাম ৬০ টাকা, এক কেজি আলু ৪০ টাকা। ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে আমাদের হয় না। তাই ৩০০ টাকা মজুরি না হলে আমরা ধর্মঘট চালিয়ে যাব। না খেয়ে মরার চেয়ে আন্দোলন করে মরা ভালো।
বিভিন্ন ভ্যালির নেতারা জানান- সাধারণ শ্রমিকরা সমঝোতা মানছেন না। তারা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে অনড়। তাই শনিবার মধ্যরাতে ভিডিও বার্তায় আন্দোলন অব্যহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তবে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করিনি। বিভিন্ন বাগানের বাগান পঞ্চায়েত নিয়ে আমরা বসেছিলাম। তারা সবাই ১৪৫ টাকা মজুরিতে ধর্মঘট প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির লোকজন আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে ১৪৫ টাকায় কীভাবে রাজি হলেন বুঝলাম না। চা শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে আমরা আন্দোলন আছি ও থাকব। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট ছাড়ছি না।
এদিকে বাগান বালিকরা জানান- চায়ের ভরা মৌসুমে শ্রমিকদের আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আমার বাগানের সেকশনে যেসব পাতা বড় হয়েছে সেগুলোর কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সেগুলো কেটে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাছাড়া দৈনিক মজুরির সঙ্গে চা শ্রমিকরা রেশন, চিকিৎসা, গৃহ সুবিধাসহ আরও নানা ধরনের সুবিধা ভোগ করছেন। এসব বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসা উচিৎ বলে তারা দাবি করেন।
উল্লেখ্য যে, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বাড়ানোর দাবিতে গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে ছিলেন চা শ্রমিকরা। এর আগে দুদিন দাবি আদায়ে তারা ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেছিলেন। কিন্তু, মালিক পক্ষ দাবি না মানায় অনির্দিষ্টকাল কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা।