এক দশক আগে লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাছান জসিমকে গুলি করে হত্যার দায়ে ১২ আসামির মধ্যে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি চার জন মারা গেছেন।
সোমবার (২৯ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনা ফারহিন এ রায় দেন বলে জানান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, এ মামলায় মোট ১২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। তাদের মধ্যে চারজন বিচার চলাকালে মারা যান। বাকি আট আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। আসামিদের মধ্যে সাতজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। হিজবুর রহমান স্বপন (৪৫) নামে এক আসামি পলাতক রয়েছেন।
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ নেতা হত্যা : ১২ আসামী সবাই খালাস
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— সদর উপজেলারদত্তপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের বাগবাড়ির মৃত ওবায়েদ উল্যার ছেলে মোবারক উল্যা (৬৬), আলী হোসেন বাচ্চু (৫০), মোবারকের ছেলে কবির হোসেন রিপন (৩০), একই বাড়ির মৃত রুহুল আমিনের ছেলে মোঃ খোকন (৫০), মোঃ মোস্তফা (৭০), আবুল হোসেন (৫০) ও করইতোলা গ্রামের বাগবাড়ির আবদুল্যা মাস্টারের ছেলে জাফর আহম্মদ (৫৫)।
নিহত মেহেদী হাসান জসিম লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মফিজ উল্যার ছেলে। ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ঘরে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মামলাসূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মফিজ উল্যার সঙ্গে একই বাড়ির মোবারক উল্যা ও আলী হোসেন বাচ্চুদের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে মোবারকরা ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করে। এ ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। এর পর থেকে মফিজের মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য হুমকি দেয়, না করলে হত্যা করা হবেও হুমকি দেওয়া হয়। এ জন্য মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে না যেতে পেরে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকতেন।
আরও পড়ুন- বিশ্ব নেতাদের অভিনন্দন-শুভেচ্ছায় ভাসছেন এরদোয়ান
একপর্যায়ে প্রতিপক্ষ মোবারকদের করা মামলাটি দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সেই সময়ের এসআই মোঃ নুরনবী তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে মফিজের ছেলে মেহেদী হাসান জসিমের নাম বাদ দেওয়ায় মোবারকরা ক্ষিপ্ত হন। এর মধ্যে জসিম সৌদি আরবে চলে যান। সেখান থেকে ছুটিতে বাড়িতে আসেন তিনি। মোবারকরা তাদের হুমকি দিলে সে বাড়িতে না থেকে সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের রাধাপুর গ্রামে আত্মীয় গোলাম মাওলার বাড়িতে আত্মগোপনে যান।
২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে জসিমের সঙ্গে তার বড় ভাই আবদুল হাই ও গোলাম মাওলার ভাই মাসুদ একই কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই রাতে প্রতিপক্ষ জানালার গ্রিল ভেঙে ঘরে ঢুকে। এ সময় তারা জসিমের বুকে গুলি চালায়। তাকে বাঁচানোর জন্য অন্যরা এগিয়ে এলে আসামিরা গুলি করার হুমকি দিয়ে তাদের পিটিয়ে আহত করে। পরে গুলিবিদ্ধ জসিমকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার পরের দিন জসিমের বাবা মফিজ উল্যা বাদী হয়ে সদর থানায় মোবারকসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আদালত পিপি জানান, ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লক্ষ্মীপুর সদর থানার সে সময়ের এসআই আবু নাছের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণে মোবারক উল্যা, আলী হোসেন বাচ্চু, অজি উল্যা, কবির হোসেন রিপন, হিজবুর রহমান স্বপন, আবুল কাশেম, সফিক উল্যাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন- ভর্তি পরীক্ষার্থীদের সহায়তা করছেন তাঁরা
পরে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লক্ষ্মীপুর জেলা সিআইডি পুলিশের সেই সময়ের এসআই আফসার আহমেদ আদালতে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আজ সোমবার (২৯ মে) রায় প্রদান করলেন।
বিচার চলাকালে আসামি আবুল কাশেম, সফিক উল্যা, আমির হোসেন ও অজি উল্যা মারা যান।
মামলার বাদী মফিজ উল্যা বলেন, “আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে মৃত্যদণ্ডের রায় হয়েছে। মামলার রায়ে আমি সন্তুষ্ট।







