লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার খোয়াসাগর দিঘী এখন জেলা শহরবাসীর প্রশান্তির ঠিকানা। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে এই দিঘির পাড়ে একটু প্রশান্তির জন্য। লক্ষ্মীপুরে তেমন কোন পর্যটনকেন্দ্র না থাকায় মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এখন এই খোয়াসাগর দিঘী। প্রতিদিন এখানে সমাগম হয় হাজার হাজার মানুষের। আর তাই এই দিঘীর পাড়ে গড়ে উঠেছে চাইনিজ, মিনি চাইনিজ, হোটেল এবং রেষ্টটুরেন্টসহ মুখরোচর খাবারের দোকান।
দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন মানুষ এসে এই দিঘীর পাড়ে আনন্দ উপভোগ করলেও। দিঘির পূর্বপাড়ে বসবাস করা মানুষগুলো আছে চরম কষ্টে তাদের চলাচলের রাস্তাটুকুও নেই।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিঘীটির উত্তর ও পশ্চিম পারে তৈরি হয়েছে সুন্দর হাটার রাস্তা কিন্তু দিঘির পূর্ব পড়ে তাকালেই দেখা মিলে তার ঠিক উল্টো চিত্র। পূর্বপাড়ে বসবাসরত যারা আছে তাদের চলাচলের রাস্তাটাও ভেঙে পড়ে গেছে দিঘীতে। যেটুকু বাকি আছে তা দিয়ে ঠিক মতো একজন মানুষও হাটতেও কষ্ট হয়। দিঘীর পাড় ঘেষা এই ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে শিশু এবং বৃদ্ধ চলাচল করতে গিয়ে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ইতিমধ্যে এক বৃদ্ধ, শিশু এবং একজন প্রতিবন্ধী দিঘীতে পড়ে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে।
দিঘীর এপাড়ের এমন সৌন্দর্য দেখে পূর্ব পাড়ের মানুষগুলো দীর্ঘশ্বাস ফেলছে প্রতিদিন। তাদের চাওয়া পশ্চিম এবং উত্তর পাড়ের মত সৌন্দর্য বর্ধন না করলেও অন্তত চলাচলের রাস্তাটুকু হোক। কোন প্রিয়জনের মৃত্যু হলে অন্তত চারজনে কাঁধে নিয়ে যাতে তাকে বের করে কবরস্থ করতে পারে।
ইতিহাস থেকে যানা যায়, দুই শতাধিক বছর পূর্বে আশপাশের এলাকা মাটি ভরাট এবং মানুষের ব্যবহারের পানি সংরক্ষণের প্রয়োজনে দালাল বাজারের জমিদার ব্রজবল্লভ রায় দীঘিটি খনন করেন।
স্থানীয় ভাষায় খোয়া মানে কুয়াশা অর্থাৎ দীঘিটি আয়তনে এতই দীর্ঘ যে এর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে তাকালে কুয়াশাময় মনে হয় বলে এর নামকরণ হয় খোয়াসাগর। ২২ একর জমিজুড়ে দিঘিটির সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। দিঘীতে নৌ-ভ্রমণেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এদিকে দূরদূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও পূর্ব পাড়ের জড়াজীর্ণ এই রাস্তা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারাও চায় পশ্চিম এবং উত্তর পাড়ের মত পূর্ব এবং দক্ষিণ পাড়টাতেও যেন সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়।
গত বছরের জুলাই মাসের ২১ তারিখে খোয়াসাগর দিঘী পার্কের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দীন। উক্ত পার্কটি লক্ষীপুর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দ এর নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরান হোসেন বাস্তবায়ন করেন।
পর্যটন মন্ত্রণালয় ও লক্ষ্মীপুর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে দিঘীর উত্তর ও পশ্চিম অংশ প্যালাসাইটিং দিয়ে পর্যটকদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য কয়েকটি বেঞ্চ নির্মাণ করা হয়। সৌন্দর্য রক্ষার্থে একটি গোলঘর নির্মাণ করা হয় খোয়াসাগর দিঘীর পশ্চিম পাড়ে। এছাড়া বসার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি পাকা বৃত্তাকার বেঞ্চ।
দিঘীর পাড়ে সড়কের পাশে লাগানো হয়েছে অনেকগুলো সোলার ল্যাম্পপোস্ট।
এতে করে রাতেও দিঘীর সৌন্দর্য মানুষের মন কাড়ে। তাছাড়াও দিঘীর পাড় ঘেষে গড়ে উঠা রেষ্টটুরেন্ট গুলো লাল নীল বাতির আলোয় তৌরি হয় উৎসবমুখর এক পরিবেশ। আর খোয়াসাগর দিঘীর পাড়ের দক্ষিণা বাতাস মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় প্রশান্তির শহরে।
দিঘী এবং পূর্বপাড়ের রাস্তা নির্মাণ প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুর
জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোসাইন আকন্দ বলেন, দালাল বাজার খোয়া সাগর দিঘির সৌন্দর্য বর্ধনে ইতিমধ্যে আমরা জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাড় বাঁধাই করেছি। এবং কয়েকটি রাইট আমরা চালু করেছি পশ্চিমপাড় ইতিমধ্যে সুন্দর করে বাঁধাই করা হয়েছে। পূর্ব এবং দক্ষিণ পাড় বাঁধাইয়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে আশা করা হচ্ছে আগামী ৬ মাস বা ১ বছেরের মধ্যে কাজটি করা সম্ভব হবে।