মা.. মাগো, এরচেয়ে প্রিয় ডাক আর কী আছে দুনিয়ায়! মা আর সন্তানের মাঝেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে খাঁটি সম্পর্ক, অতীতেও ছিল এবং ভবিষ্যতে থাকবে। যদিও মাকে ভালোবাসা-শ্রদ্ধা জানানোর কোন দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না- তবুও মাকে গভীর মমতায় স্মরণ করার দিন আজ। বিশ্বজুড়ে পালন করা হচ্ছে মা দিবস।
সন্তানের প্রতির মায়ের ভালোবাসা আর মায়ের উপর সন্তানের নির্ভরতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার থাকতে পারেনা। পৃথিবীর রং-রূপ-শব্দ-গন্ধ মা-ই প্রথম চেনান-দেখান-শেখান। জগতে মায়ের মতো এমন আপনজন আর কে আছে! যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা মাকে নিয়ে রচনা কতোনা বন্দনা। ইসলামে আছে. ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’।
আরও পড়ুন- ঘূর্ণিঝড় মোখাঃ গতি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়েছে
সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ ফল্গুধারার হয়ে আজীবন বহমান থাকলেও চলতি জীবনের যান্ত্রিকতার আজকালে আমাদেরই কেউ কেউ বুঝি না মায়ের মর্ম। জীবনের একপর্যায়ে মাকে তার যোগ্য সম্মান দিতে ভুলে যাই। মায়ের গভীর মমতার কথা আর তার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য মনে করিয়ে দিতেই প্রতিবছর আসে মা দিবস।
মা আসলেই বড় অদ্ভুত হয়। মায়ের চাওয়ার কোনো শেষ নেই। একের পর এক স্বপ্ন দেখে যান তিনি। তবে এইসব চাওয়া বা স্বপ্নের কোনোটিই তার নিজের জন্য নয়। জীবনের পুরোটাই সন্তানের জন্য উৎসর্গ করেন তিনি। সন্তানের জীবনকেই নিজের জীবন হিসেবে জানেন। মানেন। সন্তানের দুঃখে দুখী। সুখে সুখী। মা সন্তানের বন্ধু। গাইড। সব গল্প মায়ের সঙ্গে করা যায়। সব ভুল শুদ্ধ মায়ের সঙ্গে চলে। এমনকি ধকম বসিয়ে দেয়া যায় মাকে! মা তবু ফুঁসে ওঠেন না। আহা, মা। মা গো!
মায়েরা ভীষণ ‘বোকা’ হয়। মায়েরা কিছু ‘বোঝে না।’ সন্তানের স্কুলব্যাগটিও তাই আনন্দের সঙ্গে বয়ে বেড়ান। তাতেই তার সুখ! হুমায়ূন আজাদ লিখেছিলেন, আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি;-সারাদিন ঝরে ঝরে পড়তো,/ আমাদের মা ছিলো ধানখেত- সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো।/আমাদের মা ছিলো দুধভাত-তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো।/আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর-আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম…।
সন্তানের সাঁতার কাটার সেই ছোট্ট পুকুর মাকে আজ বিশেষভাবে স্মরণ করার দিন। আজ মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার, বিশ্ব মা দিবস। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারটি মা দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
বাংলাদেশে আগে ব্যাপকভাবে মা দিবস পালিত না হলেও গণমাধ্যমে প্রচারের কল্যাণে বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার দিবসটি পালনের রেওয়াজ শুরু হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশেও ক্ষুদ্র পরিসরে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। যার ব্যাপকতা দিন দিন বাড়ছে।
মা দিবসের মূল উদ্দেশ্য, মাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া। যে মা জন্ম দিয়েছেন, লালন-পালন করেছেন, তাঁকে শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য দিবসটি পালন করা হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে দিনটি পালন করা হয়। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় রবিবার নরওয়েতে, মার্চের চতুর্থ রবিবার আয়ারল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও যুক্তরাজ্যে। তবে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবসটি পালন করা হয়।
মা দিবস প্রথম উদযাপিত হয় গ্রিস ও রোমে। প্রাচীন গ্রিকরা তাদের দেবতা গ্রিককের মা রিয়ার সম্মানে উদযাপন করতো বসন্ত উত্সব। ১৬ শতকে যুক্তরাজ্যে ‘মাদারিং সানেড’ নামে একটি দিবস পালিত হতো; যুক্তরাষ্ট্রে এ দিবসটি প্রচলন হয় শান্তিকামী জুলিয়া ওয়ার্ড হোর উদ্যোগে ১৮৭২ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর স্বীকৃতি ও প্রসার ঘটে ১৯১৪ সাল থেকে।
আরও পড়ুন- আমরা সবদিক থেকেই প্রস্তুত আছিঃ দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯১২ সালে আনা জার্ভিস মাদারস ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) গঠন করেন। তিনিই ‘মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার’ আর ‘মা দিবস’ এই দুটি শব্দের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে সক্ষম হন।
আনা জার্ভিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর ও ওহাইওর মাঝামাঝি ওয়েবস্টার জংশন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর মা অ্যান মেরি রিভস জার্ভিস সারা জীবন ব্যয় করেন অনাথ-আতুরের সেবায়। মেরি ১৯০৫ সালে মারা যান। লোকচক্ষুর অগোচরে কাজ করা মেরিকে সম্মান দিতে চাইলেন মেয়ে আনা জার্ভিস। অ্যান মেরি রিভস জার্ভিসের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব মাকে স্বীকৃতি দিতে আনা জার্ভিস প্রচার শুরু করেন। সাত বছরের চেষ্টায় মা দিবস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। পরবর্তী তা ছড়িয়ে পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। একসময় তা হয়ে উঠে বিশ্বজনীন।
বিশ্বের অনেক দেশে কেক কেটে মা দিবস উদ্যাপন করা হয়। তবে মা দিবসের প্রবক্তা আনা জার্ভিস দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণের বিরোধিতা করে বলেছিলেন, মাকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর অর্থ হলো, তাঁকে দুই কলম লেখার সময় হয় না। চকলেট উপহার দেওয়ার অর্থ হলো, তা নিজেই খেয়ে ফেলা। মাকে ভালোবাসার মাধ্যমেই দিনটি পালনের প্রতিই তিনি জোর দিয়েছেন।