‘চাইতে পারো ওয়ানডে ম্যাচে সাড়ে চারশ রান’ – অর্থহীন ব্যান্ডের ‘চাইতে পারো’ গানের এমন লিরিক্স এক সময়ে অনেক দূরের পথ মনে হলেও পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ড তা সম্ভব করে দেখিয়েছে।
ঠিক তেমনই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের জন্য এক সময়ে দুইশ রান ছিল দূর আকাশের তারা। অথচ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে দলীয় রান দুইশ ছাড়িয়ে গেল। প্রথম ম্যাচের ২০৭ রানের পর আজ বাংলাদেশ একই মাঠে করে ২০২ রান। তবে আজকের পুঁজি নিশ্চিতভাবেই অনেক উপরে থাকবে। কারণ বৃষ্টিতে ম্যাচটা যে নেমে এসেছিল ১৭ ওভারে।
লিটন দাস ও রনি তালুকদারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে হেরেছে আয়ারল্যান্ড। এতে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। ২০৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রান করেছে আইরিশরা।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে বরাবরই বাড়তি সুবিধা পায় পেসাররা। কারণ ভেজা কন্ডিশনে বাড়তি পেইস আর সুইং ব্যাটারদের জন্য খেলা বেশ কঠিন কাজ। তবে আজ চট্টগ্রামে এসব ভুল প্রমাণ করলেন সাকিব। এই বাঁহাতি স্পিনার একাই ধসিয়ে দিলেন আইরিশদের। তার স্পিন বিষে নীল হয়েছে স্টার্লিংয়ের দল। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৭৭ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।
বুধবার (২৯ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সিরিজ নিশ্চিতের ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ১৭ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০২ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। যেখানে সর্বোচ্চ ৮৩ রান এসেছে লিটনের ব্যাট থেকে। জবাবে সাকিবের ঘূর্ণি জালে আটকে গেছে আইরিশরা। বাংলাদেশ অধিনায়কের ৫ উইকেটের দিনে নির্ধারিত ১৭ ওভার ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রান তোলে আয়ারল্যান্ড। সাকিব ২২ রানে শিকার করেছেন ৫ উইকেট।
আইরিশদের জন্য এই রান ছিল বিশাল কিছু। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই তারা পথ হারায়। তাসকিনের করা ইনিংসের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন স্টারলিং। পেছনে ডানদিকে ঝাপিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন। এরপর শুরু হয় সাকিবের বোলিং কারিশমা। নিজের ৩ ওভারেই সাকিবের পকেটে যায় ৫ উইকেট। এক সময়ে আয়ারল্যান্ডের রান ছিল ৬ উইকেটে ৪৩। যার ৫টিই নেন সাকিব। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ৫ উইকেটে সাকিব নিজের সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন- কোটিপতি বানানোর কারখানা রাজউকঃ অনুসন্ধানের নির্দেশ
টিম সাউদিকে টপকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখন সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক সাকিব। নামের পাশে ১৩১ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নেমেছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফাইফারের স্বাদ পাওয়া সাকিবের উইকেট এখন ১৩৬টি। ১২২ ইনিংসে ২০.৬২ গড় ও ৬.৭৯ ইনোকমিতে এ সাফল্য পেয়েছেন সাকিব। নিউ জিল্যান্ডের টিম সাউদির ১০৫ ইনিংসে উইকেট ১৩৪টি।
সাকিবের ঘূর্ণিতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় আইরিশদের মিডল অর্ডার। সেখান থেকে একশ রান ছিল দূরের পথ। কিন্তু একপ্রান্ত আগলে কুর্টিস ক্যাম্পার লড়াই করেন। তুলে নেন ফিফটি। তার ৩০ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৫০ রান আয়ারল্যান্ডকে একশ রানের সীমানা পার করায়। সঙ্গে গ্রাহাম হুমের ১৭ বলে ২০ রানও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শেষদিকে তাদের এই প্রতিরোধ পরাজয়ের ব্যবধান কমায় মাত্র।
সাকিবের ফাইফারের পর তাসকিনের পকেটে গেছে ৩ উইকেট। হাসান মাহমুদ পেয়েছেন ১ উইকেট।
এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয়ের আনন্দের সঙ্গে দলগতভাবে নতুন রেকর্ডও গড়েছে বাংলাদেশ। এবারই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই জয়। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্বাদশ সিরিজ জয়।