নিজেদের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝি ও দূরত্ব অবসান করে নরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও এক দেশ অপর দেশে দূতাবাস চালু করতে সম্মত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই বৃহৎ দেশ সৌদি আরব ও ইরান।
শুক্রবার (১০ মার্চ) চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসেছিলেন দু’দেশের সরকারি কর্মকর্তারা। সেই বৈঠকে এ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন তারা।
শুক্রবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে এ খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
ইরানের বার্তাসংস্থা ইরনা’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘(বেইজিংয়ে বৈঠকের পর) ইরান এবং সৌদি আরব উভয়ই কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় চালু করার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী দু’মাসের ফের দূতাবাস চালু করবে দুই দেশ।’
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নৌর নিউজ ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, চীনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কাউন্সিলের সেক্রেটারি আলি শামখানিকে, এক সৌদি কর্মকর্তা এবং চীনা কর্মকর্তা ওয়াং ইয়িকে দেখা গেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বলেছে, বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রাষ্ট্রদূত বিনিময়ের জন্য বৈঠক করবেন।
তাৎক্ষণিকভাবে সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যমে চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ)-তে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে দুই দেশের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে সমঝোতা হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন- শনিবার বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, উভয় দেশ ২০০১ সালে স্বাক্ষরিত একটি নিরাপত্তা চুক্তি সচল করতে সম্মত হয়েছে।
২০১৬ সালে তেহরান ও রিয়াদ কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে অতীতে বেশ কয়েক দফা উভয় দেশের কর্মকর্তারা আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন।
প্রসঙ্গত, সুন্নিপ্রধান দেশ সৌদি আরব ও শিয়া প্রধান দেশ ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রভাবশালী দেশ। এ দুদেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা ও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব কেবল পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, তা ছড়িয়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতপূর্ণ এলাকায়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইয়েমেন। দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের পক্ষে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব জোট। আর হুথি বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করছে ইরান।
শিয়াপন্থী মুসলিম অধ্যুষিত ইরানের সঙ্গে সুন্নিপন্থী সৌদি আরবের সম্পর্ক কখনো তেমন উষ্ণ ছিল না। তবে ২০১৬ সালে দুই দেশের সম্পর্কের গুরুতর অবনতি ঘটে।
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুরে হাসপাতালে দুদকের অভিযান
ওই বছর সৌদিতে এক শিয়া ধর্মীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয় ইরানে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা।
ওই ঘটনার পর পরই ইরানে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয় সৌদি। জবাবে ইরানও সৌদিতে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে। পরবর্তী বছরগুলোতে ইয়েমেন, সিরিয়া ও লেবাননে চলমান গৃহযুদ্ধে রীতিমতো মুখোমুখী অবস্থান গ্রহণ করে সৌদি ও ইরান— যা দুই দেশের শীতল কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও বৈরী করে তোলে।
মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতিতে সৌদি ও ইরান— উভয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বৃহৎ এ দুটি দেশ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এতদিন হুমকির মুখে ছিল।
আলজাজিরার সংবাদ বিশ্লেষক আলী হাশিম এ সম্পর্কে বলেন, ‘গত দুই বছরে বাগদাদে ৫দফা বৈঠক হয়েছে ইরান ও সৌদির সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে, কিন্তু সেসব বৈঠক থেকে কোনো ফলাফল আসেনি।’
‘দুই দেশের মতপার্থক্যের কারণে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এতদিন হুমকির মধ্যে ছিল এবং তাদের এই বৈরিতার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী দুই দেশ ইয়েমেন ও লেবানন। বেইজিংয়ে যে ঐকমত্য হয়েছে হয়েছে— ইরান ও সৌদি যদি তা মেনে চলে…মধ্যপ্রাচ্যের ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে সেটি খুবই ইতিবাচক একটি ব্যাপার হবে।’