নেত্রকোনার মদনে সংস্কারের চারদিনের মাথায় ধসে পড়েছে ফসল রক্ষা বাঁধ। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে আগাম বন্যায় ফসল হানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে কাজের মান ও অনিয়ম দুর্নীতি নিয়েও।
উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের ‘বালুই ব্রিজ উত্তরপাড় ফসল রক্ষা বাঁধ উপ-প্রকল্প’ বাঁধটি গত শনিবার ধসে পড়ে পাশের একটি খালে। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এটির সংস্কার কাজ শেষ হয়। সংস্কারের চারদিনের মাথায় বাঁধ ধসে যাওয়ায় এ নিয়ে নানা সমালোচনা ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা।
রবিবার সরেজমিন গিয়ে বাঁধ ধসে যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। দেখা গেছে, খাদের পাশে মাটি আটকে থাকার জন্য হাতে গোনা কয়েকটি বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। বেড়াটিও বাঁধ থেকে অনেক দূরে দেওয়া হয়েছে। মাটি ধরে রাখার জন্য এসব যথেষ্ট নয়।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, পাউবো’র তত্ত্বাবধানে হাওরে বোরো ফসল রক্ষায় কাবিটা কর্মসূচির আওতায় জেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ২০৬ টি বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মদন উপজেলায় ২৪টি ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। এ কাজের বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকা। এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ‘বালুই ব্রিজ উত্তরপাড় ফসল রক্ষা বাঁধ উপ-প্রকল্প’ বাঁধটির বরাদ্দ ১৮ লাখ ১১ হাজার ৯৭৯ টাকা। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর জেলার সবগুলো বাঁধের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শুরু হয়ে শেষ হয়েছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, কাজ শেষ হওয়ার চার দিনের মাথায় বাঁধ ধসে পড়েছে কোন কারণ ছাড়াই। বন্যার পানি এলে এ বাঁধ টিকবে কেমনে? ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে প্রতিবছরই অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এ বিষয়টাতে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বাঁধ নিয়েও ব্যবসা হয়। বাঁধে কোন রকম নামমাত্র মাটি ফেলে দায় সারেন সংশ্লিষ্টরা। আর কৃষকরা এসব অনিয়মের ভুক্তভোগী হয়। বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে গেলে উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের বেঁচে থাকার অবলম্বন শেষ হয়ে যাবে। এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেবে। পরিবার পরিজন নিয়ে কৃষকরা পথে বসবে। সেইসাথে গো-খাদ্যর সংকটও দেখা দেবে। গৃহ পালিত পশুরা না খেয়ে মারা যাবে।
আরও পড়ুন- গুলিস্তানে বিস্ফোরণঃ বাড়ছে লাশের সারি, নিহত ১৫
উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের রফিকুল ইসলাম, আনু মিয়া ও গোলাম কিবরিয়াসহ অন্যান্য কৃষকরা জানান, হাওরে একটি মাত্র বোরো ফসলের ওপর আমাদের পরিবারের সারা বছরের খাওয়া দাওয়াসহ ছেলে-মেয়েদের পড়াশেনার খরচ নির্ভর করে। আগাম বন্যায় বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে গেলে পরিবার নিয়ে আমদের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। একই অবস্থা হবে পুরো এলাকার অন্য কৃষকদের। কারণ গ্রামের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার মদন উপজেলায় ১৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৭০৬ মেট্রিক টন।
পিআইসি’র সভাপতি আজিজুর হক সোহেল বলেন, কুড়টি গভীর হওয়ায় মাটি দিলেও হারিয়ে যায়। বাঁশের বেড়া ও লোহার রড দিয়ে শক্ত টানা দেওয়া হয়েছিল। তবুও সম্প্রতি কুড়ের কাছে বাঁধটি ধসে গেছে। বাঁধটি শক্তভাবে দেওয়ার জন্য এর বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিৎ। নির্ধারিত টাকাই তো সময় মতো পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত বরাদ্দ তো দুরহ বিষয়। এসব কাজে আসলে আমাদের লোকশান হয়। নিজের জমি আর ফসলের মায়ায় এ কাজ নেই। এই বাঁধটি শক্তভাবে মেরামতের জন্য অধিক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বলেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এখনো বরাদ্দ পাইনি।
আরও পড়ুন- অনুদান নয়, প্রাপ্য চায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোঃ প্রধানমন্ত্রী
পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল হক বলেন, কুড়ের পাশে বাঁধটি ধসে গেছে। ধসে যাওয়া অংশটি মেরামতে কাজ করা হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল নেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) উপজেলা কাবিটা কর্মসূচির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিনা শাহরীন বলেন, ধসে যাওয়া জায়গাটি মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ কাজে প্রয়োজনীয় বাঁশ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। সেজন্য যথাযথ বরাদ্দও চাওয়া হয়েছে।
পাউবো’র জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান বলেন, জায়গাটি অনেক গভীর বিধায় এমনটা হয়েছে। দ্রুত এটি মেরামত করা হবে। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।