ঢাকাTuesday , 16 August 2022

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা: সড়ক সচিব

Link Copied!

রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে ছিটকে প্রাইভেটকারে গার্ডার পড়ার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না গেঝুবা গ্রুপ করপোরেশনের (সিজিজিসি) গাফিলতির বিষয়টি উঠে এসেছে। তাই ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে তিনি এসব কথা বলেন।
ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে জানতে চাইলে আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তি অনুযায়ী আমরা আমাদের চুক্তিতে যেমন থাকে জরিমানা করা হয়, কাজ টার্মিনেট করা হয় এবং তারা যেন আর কোনো কাজ করতে না পারে এজন্য ব্ল্যাকলিস্ট করা হয়। চূড়ান্ত রিপোর্টটা আসলেই চিঠি ইস্যু করবো, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এত বড় ক্ষতির জন্য শুধু জরিমানা করা যাবে না। সর্বোচ্চ ব্যবস্থা যদি নেওয়া হয় তার লাইসেন্স চলে যাবে। বাংলাদেশে তারা আর কোনো কাজ করতে পারবে না। যারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের যারা সুপারভাইজার সেখানে ছিল আজকেই তাদের সবাইকে শোকজ করবো। কমিটি আমাকে আগামী ২ দিনের মধ্যে রিপোর্টটা দেবে।
সচিব বলেন, ছুটির দিনে ঠিকাদারের কাজ করার কথা না। তারা কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই কাজ করছিল। এভাবে উন্মুক্ত রেখে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। নিয়মানুযায়ী কাজ করতে হলে আগের দিন তারা একটি ওয়ার্ক প্ল্যান দেবে, তাদের কতজন লোক থাকবে, কতগুলো ক্রেন লাগানো হবে, পুলিশকে জানাবে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এগুলো না করেই কাজটা করেছে। কোনো অবস্থাতেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে এ ধরনের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।
এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে সচিব বলেন, আগে যারা নিরাপত্তায় ছিল তাদের আমরা টার্মিনেট করেছি। আমি যতটুকু জেনেছি আগের ঘটনাগুলোতে যারা গাফিলতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ দায় এড়াতে পারে না। একদিনে একটি তদন্ত হয় না। ঘটনার পরপরই কিন্তু আমি সবাইকে ফোন করেছি। কোনো অবস্থাতেই অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করার সুযোগ নেই। ঠিকাদার কেন করেছে সেটাই হলো প্রশ্ন। কেন সে করলো? কমকর্তা যারা মনিটরিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।
তিনি বলেন, যে ক্রেনে তোলা হয়েছিল সেটি এর জন্য সক্ষম কি না, এটা তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিলে জানা যাবে। এটা কিন্তু সে উপরে তুলছিল না, এটা স্থানান্তর করছিল। একটা সে সরিয়েছেও। নিয়মিত মামলা হয়েছে।
সড়ক সচিব বলেন, একটা অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান কনসালটেন্ট। এ ধরনের কাজের ক্ষেত্রে কনসালটেন্ট থাকে কাজ বুঝিয়ে দিতে, তারা একটি ম্যাথডলজি দেয় কীভাবে করতে হবে। দেওয়ার পরে ফেল করলে এক কথা। তারপরেও কনসালটেন্টকে বলেছি তোমার খোঁজ নেওয়ার কথা। সে বলেছে, বন্ধের দিন তো কাজ করার কথা না।
তদন্ত কমিটির প্রধান এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আক্তার বলেন, রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশনের (সিজিজিসি) দায় দেখছে দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি। এমনকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার লঙ্ঘন করেছে বলেও প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এসব বিষয় বাংলাদেশে অবস্থিত চীনের দূতাবাসকে জানানো হবে।
নীলিমা আক্তার বলেন, আমাদের এই তদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে যে, তারা (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) নিরাপত্তার বিষয়টি অনেকবারই লঙ্ঘন করেছে। এজন্য আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে জানাতে চাই। এটা তদন্তে আমরা বলেছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমি এক কথায় বলতে চাই, দায় এড়ানোর প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশের নাগরিকদের মূল্যবান জীবন চলে গেছে, এক্ষেত্রে আমরা কোনোরকম আপস করতে চাই না। আমরা বলছি যে এটি একটি ধারাবাহিক (তদন্তের) বিষয়। কে দায়ী, কতটুকু দায়ী-সেটা কিন্তু ধাপে ধাপে আমাদেরকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সবগুলোর একসঙ্গে একটা যোগসূত্র আছে। সে জিনিসগুলো আমাদের অনুসরণ করতে হবে। এটা এভাবে ভাবার কারণ নেই যে, আমরা একটা চাইনিজ কোম্পানিকে দায়ী করে আমাদের দায় ছেড়ে দিচ্ছি। আমাদের নাগরিকের জীবন মূল্যবান। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এটা এভাবে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে? ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা এই জিনিসগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে দায়টা ফিক্সড করতে চাচ্ছি যে কে কতটুকু দায়ী।
তিনি বলেন, আমাদের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ হয়ে গেছে। এখন আমরা শাস্তি দিতে পারি, তাদের বাতিল করে দিতে পারি। সেক্ষেত্রে আমরা যদি পুনরায় কন্ট্রাক্টর সিলেকশনে যাই তাহলে আমাদের জনগণকে আরও ভোগান্তির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। কিন্তু ভোগান্তি এক জিনিস আর মরদেহ দেখা আরেক জিনিস। সেজন্য এ বিষয়ে এখন আমরা আর আপস করছি না।

আরও দেখতে পারেন-

⇒ ভারত না চীন? কূটনৈতিক চাপে শ্রীলংকা

⇒ নবাবগঞ্জে বাঁশঝাড় থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার

⇒ রাজনীতিতে ‘ফিরছেন’ সোহেল তাজ

⇒ মেট্রোরেলের প্রথম নারী চালক লক্ষ্মীপুরের আফিজা

⇒ ফের সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুললেন সেই প্রিয়া

জে এম আলী নয়ন

সর্বমোট নিউজ: 4964

Share this...

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
ঢাকা অফিসঃ ১৬৭/১২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা- ১০০০ আঞ্চলিক অফিস : উত্তর তেমুহনী সদর, লক্ষ্মীপুর ৩৭০০