লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের-সংসদ সদস্য এডঃ নুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে শহরের সুবিধা গ্রামেরও পৌঁছাতে হবে। সে লক্ষেই এই উদ্যোগ গ্রামীণ জনপদে মৃত্যুর হার অনেক কমে আসবে।’সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ও জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। অসহায়, দুস্থ, প্রতিবন্ধীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সেবা দিতে প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জে যাচ্ছে ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। এসময় চরপাতা গ্রামকে “স্মার্ট ভিলেজ” ঘোষনা করেন সাংসদ ও জেলা প্রশাসক। আগামি দিনে উন্নয়নমূলক কাজে এগ্রামকে ঢেলে সাজানো হবে।
সোমবার (৩০ জানুয়ারী) বিকাল ৪ টা-৭টা পর্যন্ত রায়পুর উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের সাবেক সাংসদ হারুনুর রশীদের বাড়ীর সামনে আয়োজিত ৪নং সোনাপুর, ৫নং চরপাতা, ৬নং কেরোয়া ও ৭নং বামনী ইউনিয়নবাসীর জন্য ১টি স্বপ্নযাত্রা এ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করেন। এতে এই এম্বুলেন্সটি সাধারণ মানুষ সহজে সেবা নিতে পারবে। কমবে দুর্ভোগসহ নানা হয়রানি। প্রশাসনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে লক্ষ্মীপুরে গ্রামীণপর্যায়ে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে শুরু হওয়া কার্যক্রমটি এখন পরিচালিত হচ্ছে ১১টি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে। এই অ্যাম্বুলেন্স রায়পুরসহ জেলার ৫৮টি ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তহবিল থেকে কেনা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সগুলো। ২৪ ঘণ্টায় সদরসহ জেলার ৫টি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছে ‘স্বপ্নযাত্রা’। সহজেই মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে এই সার্ভিস ব্যবহারও করতে পারছেন। সে জন্য গুগল প্লে স্টোরে দেয়া হয়েছে স্বপ্নযাত্রা নামের অ্যাপ, যা ডাউনলোড করে সেবার বিস্তারিত তথ্যজানা যাবে।
উপজেলার চরপাতা গ্রামের সালেহা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, হঠাৎ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিতে বিভিন্ন স্থানে অ্যাম্বুলেন্স খুঁজে না পেয়ে সিএনজি করে লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে যাই। এখন কষ্ট করতে হবে না– ‘স্বপ্নযাত্রা’ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে স্বল্প খরচে অল্প সময়ে বাড়িতে পৌঁছে যাবে অ্যাম্বুলেন্স। স্বল্প সময়েই পৌঁছানো যাবে হাসপাতালে।
কেরোয়া গ্রামের শহীদ মিয়া বলেন, ‘প্রতি কিলোমিটার রোগীদের কাছ থেকে এসি গাড়ি ২০ টাকা হারে নেয়া হচ্ছে। যেখানে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স করে ভাড়া দিতে হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। সেখানে এ সার্ভিসের মাধ্যমে নেয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।’এমন সেবায় খুশি তারা। তাদের ভাষ্য, সহজে যেমন সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি স্বল্প খরচে সবাই সেবাও নিতে পারছেন।
রায়পুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘কম খরচে ও সঠিক সময়ে এ সেবা পেয়ে খুশি থাকবে সাধারণ মানুষ। এ সেবা কার্যক্রম উপজেলাজুড়ে ব্যাপক সাড়া মিলেছে।’
প্রশাসনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনিও। তার দাবি, এ ‘স্বপ্নযাত্রা’ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মাধ্যমে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষগুলো স্বাস্থ্যসেবা নিতে সহজ হবে। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে দেশে ছড়িয়ে দেয়ার দাবি জানান। ।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনজন দাশ বলেন, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে রায়পুরে গ্রামীণপর্যায়ে সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ‘স্বপ্নযাত্রা’ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে। সরকারি অনুদানে নয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিজস্ব অর্থায়নে চলছে এ কার্যক্রম।’
জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে চাই। আমরা শহরের সুবিধা গ্রামেও পৌঁছাতে চাই। সে লক্ষেই এই উদ্যোগ। আমরা এতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। সারা দেশে এ কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে পারলে গ্রামীণ জনপদে মৃত্যুর হার অনেক কমে আসবে।’
এটি অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দেন জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি এ কার্যক্রমে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা আহ্বানও জানান তিনি।
অনুষ্ঠান শেষে সাংসদসহ অতিথিরা ২০০ অসহায় মানুষকে শীতবস্র (কম্বল) উপহার দিয়েছেন।