লিওনেল মেসির কাঁধে ছিল প্রত্যাশার পারদ। অসাধারণ ক্যারিয়ারের দুর্দান্ত সমাপ্তি, ৩৬ বছরের শিরোপা খরা ঘোচানোর সঙ্গে থেমে যাওয়া আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিদের স্বপ্ন পূরণের ভার ছিল তার ওপর। জোড়া গোল করে নিজের কাজটা তিনি করেছেনও। কিন্তু রঙ জমা ম্যাচে কামব্যাকের গল্প লিখেছেন একজন তরুণ কিলিয়ান এমবাপ্পে। তার হ্যাটট্রিকে ১২০ মিনিটের ম্যাচ ৩-৩ গোলের সমতায় শেষ হয়। টাইব্রেকারের লড়াইয়ে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মেসির আর্জেন্টিনা।
টাইব্রেকারে চতুর্থ গোলের সঙ্গে সঙ্গেই লুসাইল স্টেডিয়াম যেন ফেটে পড়ল উল্লাসে। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়াম রূপ নিলো আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে। সমর্থকদের কোলাহলে তখন কানে তালা লেগে যাওয়ার যোগাড়। এ চিৎকার যেন আকাশই ছুঁয়ে ফেলতে চাইল। এমন উল্লাস হবেই বা না কেন! এই দিনটির জন্য যে আর্জেন্টাইনদের অপেক্ষা ছিল ৩৬ বছরের! ম্যারাডোনার পর মেসি যে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা এনে দিলেন!
বিশ্বকাপ ফাইনাল তো বটেই, ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ম্যাচ এটা কি না তা নিয়ে জোর তর্কই হতে পারে। ছয় গোল, হ্যাটট্রিক, টাইব্রেকার সবই যে হয়েছে এই ম্যাচে। নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে সমতা, অতিরিক্ত সময়ে ৩-৩। এরপর টাইব্রেকার রোমাঞ্চ ছাড়িয়ে ৪-২ গোলে জয় আর্জেন্টিনার, তাতেই তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আকাশি-সাদারা।
আরও পড়ুন- যখনই সময় পাই খেলা দেখিঃ প্রধানমন্ত্রী
ম্যাচের অধিকাংশ সময় নিয়ন্ত্রণ করে আর্জেন্টিনা। ২৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলকে প্রথম লিড এনে দেন লিওনেল মেসি। ফ্রান্স তাদের বক্সে ডি মারিয়াকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় আলবিসেলেস্তেরা। এরপর ৩৬ মিনিটে দুর্দান্ত এক কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করে রাশিয়া বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন্স ফ্রান্সকে একপ্রকার ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন ডি মারিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও ধাক্কা খাওয়া ফ্রান্স সুবিধা করতে পারেনি। ম্যাচের ৮০ মিনিটে কাঙ্খিত ব্রেক থ্রু পায় লেস ব্লুজরা। কোলো মুয়ানিকে ফাউল করেন আকাশি-সাদার ডিফেন্ডার নিকোলাস ওটামেন্ডি। পেনাল্টি থেকে বল জালে পাঠিয়ে দেন ফ্রান্সম্যান কিলিয়ান এমবাপ্পে। এক মিনিটের মধ্যেই দ্বিতীয় গোল করেন ২৩ বছরের তরুণ এমবাপ্পে। মার্কাস থুরামের পাস ধরে জোরের ওপর শটে জালে পাঠিয়ে দেন তিনি।
১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্টের পর বিশ্বকাপ ফাইনালের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করেন এমবাপে। এরপরও ম্যাচের আকর্ষণ বাকি ছিল। আর্জেন্টিনার প্রায় গোল হওয়া বাঁচিয়ে দেন লরিস। অন্য দিকে এমবাপেও আরো গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন। তবে লাভ হয়নি, ১২০ মিনিটের আগে আর কোনো গোল পায়নি কোনো দল। খেলাটা গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে এমবাপের গোল দিয়ে শুরু। এরপর মেসিও গোল করেন। আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ এরপর কিংসলে কোম্যানের শট সেভ করেন।