আর্জেন্টাইনরা লিওনেল মেসির মধ্যে খুঁজে পাচ্ছেন দিয়েগো ম্যারাডোনার ছায়া। ১৯৮০’র দশকে ম্যারাডোনা যেভাবে একটা দলকে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য প্রভাবিত করেছিলেন। ঠিক তেমনটাই করছেন লিওনেল মেসি। একথা প্রকাশ্যে বলতেও দ্বিধা নেই আর্জেন্টাইনদের। মেসি ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের প্রত্যাশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলটি উঠে এসেছে সেমিফাইনালে।
মরুর দেশ কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ফাইনালে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা এবং ক্রোয়েশিয়া। দুটি দলই কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে জিতে সেমিফাইনালে উঠেছে। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে প্রথম নকআউটে পেনাল্টি শুটআউট চালুর পর আর্জেন্টিনা সর্বোচ্চ ৬ বার টাইব্রেকারে গিয়েছে। ক্রোয়েশিয়া গিয়েছে তিনবার। টাইব্রেকারে ক্রোয়দের সাফল্য শতভাগ।
আরও পড়ুন- ‘বিএনপিকে কোনো ছাড় নয়’
আর সেমিফাইনাল আর্জেন্টিনার এমন এক মঞ্চ যেখানে তারা কখনও হারেনি। কাতার বিশ্বকাপের আগে আর্জেন্টিনা যে পাঁচটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে; সেগুলো হচ্ছে- ১৯৩০ উরুগুয়ে বিশ্বকাপ, ১৯৭৮ ঘরের বিশ্বকাপ, ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপ, ১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপ ও ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে।
এর মধ্যে ১৯৭৮ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে কোনো সেমিফাইনাল ছিল না। প্রথম রাউন্ড শেষে ৮ দল নিয়ে হয়েছিল দ্বিতীয় পর্ব। দুই গ্রুপে খেলা শেষে শীর্ষ দুই দল খেলেছিল ফাইনাল। আর্জেন্টিনা ৩-১ গোলে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে জিতেছিল প্রথম শিরোপা।
চার সেমিফাইনালের প্রথমটি আর্জেন্টিনা খেলেছিল ১৯৩০ সালে। প্রতিপক্ষ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর্জেন্টিনা ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে জিতে উঠেছিল ফাইনালে।
আরও পড়ুন- উলিপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নাজু নামের এক যুবকের মৃত্যু
তবে স্বাগতিক উরুগুয়ের কাছে ফাইনালে আর্জেন্টিনা হেরেছিল ৪-২ গোলে। আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় ও শেষবার বিশ্বকাপ জিতেছে ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোতে। সেবার আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে ম্যারাডোনার জোড়া গোলে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল বেলজিয়ামকে। ফাইনালে জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়েছিলেন ম্যারাডোনারা।
১৯৯০ সালে ইতালিতে অনুষ্ঠিত পরের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল খেলেছিল স্বাগতিকদের বিপক্ষে। টাইব্রেকারে জিতেছিলেন ম্যারাডোনারা। তবে ফাইনালে প্রতিশোধ নিয়ে জার্মানি জিতেছিল ১-০ গোলে। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল খেলেছিল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্যভাবে শেষ হলে গোলরক্ষক রোমেরোর কৃতিত্বে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ৪-২ ব্যবধানে। ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা।
আরও পড়ুন- নবীনগরে বিজয়ের মাসে দুর্নীতি বিরোধী মানববন্ধন
উল্লেখ্য, ১৯৮২ বিশ্বকাপে জার্মানি-ফ্রান্স সেমিফাইনালে প্রথমবার টাইব্রেকার পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। এরপর থেকে এই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত আরও ৩৩টি বিশ্বকাপ ম্যাচে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। আজকের আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচটাও টাইব্রেকারে যেতে পারে। দুই দলের গোলকিপারই দুর্ধর্ষ পারফর্মেন্স দেখাচ্ছেন। কিন্তু পরিসংখ্যানে এগিয়ে ক্রোয়েটরাই। ২০১৮ বিশ্বকাপের শেষ ষোলো এবং কোয়ার্টার ফাইনালে তারা যথাক্রমে ডেনমার্ককে ৩:২ এবং রাশিয়াকে ৪:৩ ব্যবধানে হারিয়েছিল। চলতি বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েটরা হট ফেবারিট ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে হারায় ৪:২ গোলে।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনা ১৯৯০ সালে দুইবার, ১৯৯৮, ২০০৬, ২০১৪ এবং ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত একবার টাইব্রেকারে গিয়েছে। বাকি ছয় ম্যাচ জিতলেও ২০০৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তারা জার্মানির কাছে টাইব্রেকারে ২:৪ ব্যবধানে হেরে যায়। তবে ১৯৯০ এবং ২০১৪ সালের সেমিফাইনালে দুটি ম্যাচই টাইব্রেকারে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ ছিল যথাক্রমে ইতালি এবং নেদারল্যান্ডস।