প্রবাসীবহুল লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অবৈধ ট্রাভেলস এজেন্সি। এদের বেশিরভাগই গড়ে ওঠেছে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে। এসব ট্র্র্যাভেলস এজেন্সির বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মানব পাচার, অবৈধভাবে বিদেশ যেতে প্রলুব্ধ করা, টাকা নিয়ে বিদেশ না পাঠানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে।
আবার এই লাইসেন্স আনতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনাল য়ের কর্মকর্তাদের দ্বারাও বিভিন্নভাবে হয়রানীর শিকার হতে হয় বলে ব্যাবসায়ীদের অভিযোগ।।
তবে, প্রায় ৬ মাস আগে তদন্ত বা লাইসেন্স যাচাই-বাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কর্মকর্তারা আসার কথা থাকলেও কেও আসেননি বলে গাজি মার্কেটের কয়েকজন ট্রাবেল ব্যাবসায়ী জানান।
অবৈধ ট্রাবল এজেন্সিগুলো হলো-নিউ মার্কেট ২য় তলায় মক্কা ট্রাভেলস, তাকওয়া ট্রাভেলস ও এয়ার সিটি প্রধান সড়কে এম আর বি ট্রাভেলস, পপি স্টোরের পাশে মাছুম ট্রাভেলস, মালেকের ইলেকট্রিক দোকানের উপর রায়পুর ট্রাভেলস, বিসমিল্লাহ হোটেলের বিপরিত ২য় তলা। প্রধান সড়কে মোহাম্মদিয়া হোটেলের সামনে হারুনের লেপ-তোশকের দোকানে হয়। সোনাপুর ইউপির পাটওয়ারি রাস্তার মাথা স্থানে উয়িংম্যান ট্রাভেলস, গাজী মার্কেট আন্ডার গ্রাউন্ড মক্কামদিনা ট্রাভেলস। ৩য় তলায় লাইসেন্সপ্রাপ্তগুলো হলো- শিশির বিন্দু এন্টার প্রাইজ, নকিব ইন্টারন্যাশনাল,জাফর ইন্টার ন্যাশনাল, খান ট্রাভেলস, মদিনা ট্রাভেলস এবং এয়াসিটি ট্রাভেলসহ রায়পুরে ১৮টি লাইসেন্স নাই।
ট্রাভেলস এজেন্সির নামে অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়টিও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ গেলেও মানবপাচারে জড়িত অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে না গত তিন বছরে। শহরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জোড় দাবি উঠেছে।
সূত্রে জানা গেছে, ট্রাভেলস এজেন্সি চালু করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করতে হয়। এমন নিবন্ধন আছে রায়পুরে মাত্র ৫ প্রতিষ্ঠানের। তবে নিবন্ধন ছাড়াই আরও ১৮টি ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। অবৈধভাবে দিব্যি ব্যবসা চালাতে প্রতিষ্ঠানগুলো আরো গড়ে উঠছে।
জানাযায়, বৈধের চেয়ে অবৈধ ট্রাভেলস এজেন্সিই বেশি। এরা বিদেশ পাঠানোর নামে নানাভাবে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে। এসব মানব পাচারকারীদের কারণে রায়পুরের সাধারণ মানুষ অনেককে সর্বস্ব হারাতে হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইউরোপ পাঠাতে প্রাণ দিতে হচ্ছে।২০১৯ সালের পর এপর্যন্ত কয়েকটি স্থানে নৌকায়-ট্রলারে প্রবাসে যেতে অনেক প্রবাসী হতাহত ও নিখোঁজ রয়েছেন। বর্তমানে অবৈধ ট্রাভেলস এজেন্সির সংখ্যাও বাড়ছে। কর্মকর্তার বিভিন্ন সময় অবৈধ এজেন্সি ও মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সরকার সংশ্লিষ্টদের তথ্য দিয়েছি। সরকার কোনো যাচাই বাচাই না করে মানব পাচারকারীদের লাইসেন্স দিচ্ছে। যার ফলে সরকারের বৈধতা নিয়ে মানবপাচার করছে কিছু অবৈধ ব্যবসায়ী। তাই লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরো সচেতন হবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাবসায়ী বলেন, এ ব্যাবসা ভালো। শুধু পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ২৩ জনের মত ব্যাবসা করছেন। মন্ত্রনালয় থেকে লাইসেন্স আনতে ৫ হাজার থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মত খরচ হয়। কোন রকম ঢাকার সাথে যোগাযোগ রেখে ব্যাবসা করছে। আমরা চাই সিভিল এভিয়েশনের লাইসেন্স নিয়ে ব্যাবসা করতে। স্থানীয় প্রশাসন প্রতি তিন মাস অন্তর অভিযান চালালে ব্যাবসায়ীরা সতর্ক হয়ে যাবে।।
পৌরসভা লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তা আরমান হোসেন বলেন, রায়পুরে ১১টির মতো ট্রাভেলস এজেন্সির লাইসেন্স রয়েছে। অনেকের লাইসেন্স করা আছে কিন্তু নবায়ন করা নেই। নবায়ন না করলে এটা স্বাভাবিকভাবেই বাতিল হয়ে যায়।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনজন দাশ বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ অনুযায়ী প্রতি মাসেই অবৈধ ট্রাভেলস এজেন্সি ও মানবপাচারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথা। অবৈধ ট্রাভেলস এজেন্সিগুলো খুঁজে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানব পাচারকারীদের ট্রাভেলস এজেন্সির লাইসেন্স প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লাইসেন্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় বলতে পারবে।