রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে ‘দশম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা-২০২২’। গত কয়েক বছরের তুলনায় মেলায় এবারও নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে।
মেলায় অংশ নেওয়া ১৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই নারীদের। এর বাইরেও যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রায় প্রতিটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অবদান রাখছে নারী।
এবারের মেলায় দেশের ৩০০ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পাটপণ্য, খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী, হালকা প্রকৌশল পণ্য, আইটি পণ্য, প্লাস্টিক ও সিনথেটিক, হস্তশিল্প পণ্য, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যার ইত্যাদি প্রদর্শন ও বিক্রি করছেন। আগমী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেলাটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিবারের মতো এবারো মেলায় কোনো প্রবেশমূল্য রাখা হয়।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর সেগুন বাগিচা থেকে মেলায় এসেছেন আকলিমা আক্তার। তিনি বলেন, প্রতি বছরই মেলায় আসি। মেলায় ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায়। তাই পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করে নিয়ে যাই। বাইরে থেকে কাপড় কিনলে দামও বেশি রাখে, অনেক সময় কাপড়ের মানও খারাপ হয়। মেলায় এমনটা হয় না।
আরও পড়ুন- হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেচযন্ত্র “দোন”
মেলায় সবচেয়ে বেশি ক্রেতা সমাগম দেখা গেছে, শীতের কাপড়, মেয়েদের কসমেটিকস ও কাপড়ের স্টলগুলোতে। এছাড়াও অর্গানিক আইটেম ও লেদার পণ্যের স্টলগুলোতেও উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে ক্রেতারা কম আগ্রহ দেখাচ্ছে মাটির জিনিসপত্র, পাট পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যে।
পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ইকো প্রডাক্টসের স্বত্বাধিকারী মোখলেছুর রহমান বলেন, এখনো আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। প্রতি বছর শেষের দিকে ক্রেতা সমাগম ঘটে। এবারও প্রত্যাশা করছি শেষের দিকে বিক্রি বাড়বে।
মেলায় একমাত্র বেত পণ্যের স্টল দেবায়ন হ্যান্ডিক্র্যাফ্টস লিমিটেডের বিক্রেতা প্রকৌশলী দেবাশীষ সরকার। এই উদ্যোক্তা বলেন, মেলায় প্রতি বছরের মতো এবারও বিক্রি ভালো কিন্তু আশানুরূপ বিক্রি এখনো করতে পারিনি। সকালের দিকে ক্রেতা সমাগম একটু কম থাকলেও দুপুর থেকে ক্রেতাদের চাপ বাড়তে থাকে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে বেচা-কেনা ভাল হবে।
এর আগে গতো বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১০ দিনব্যাপী দশম জাতীয় এসমই পণ্য মেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নূরুর মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। এসময় তারা বর্ষসেরা উদ্যেক্তাদের হাতে এসএমই পুরস্কার তুলে দেন।
আরও পড়ুন- পরিবেশ নিয়ে আমরা কতটা সচেতন?
দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মোঃ জসিম উদ্দিন ও এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান প্রমুখ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উৎপাদন, বিপণন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য যে ছয় জনকে এবছর বর্ষসেরা ‘জতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরষ্কার’দেওয়া হয় সেখানেও দুই নারী পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার। বর্ষসেরা মাইক্রো উদ্যোক্তা (নারী) পুরস্কার পান পাট পণ্যের প্রতিষ্ঠান তুলিকা’র প্রতিষ্ঠাতা ইসরাত জাহান চৌধুরী ও বর্ষসেরা ক্ষুদ্র (নারী) উদ্যোক্তার পুরস্কার পেয়েছেন তনিন স্পোর্টস ও ডেইরি শিল্পের উদ্যোক্তা মোছাঃ তাসলিমা খাতুন।
শ্রেষ্ঠ বর্ষসেরা মাইক্রো উদ্যোক্তার পুরস্কারজয়ী ইসরাত জাহান চৌধুরী বলেন, আমি ভীষণ আনন্দিত, স্বাধীনভাবে কিছু করতে চাইছিলাম। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে অনেকদিন অবসর ছিলাম, অনেক ভেবে ২০১৭ সালে তুলিকা শুরু করি। আমার আগ্রহের জায়গা ছিলো দেশি পণ্য রফতানি করা। ‘তুলিকা’ একটু একটু করে সেই পথেই এগিয়েছে।
নিজের উদ্যোক্ত হওয়া ও পাটপণ্যের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ারে বিষয়ে ইসরাত বলেন, আমাদের দেশের যেসব পণ্য বাইরে রফতানি হয় তার মধ্যে পাট পণ্যের চাহিদা অনেক বেশি। পাট পণ্য দিয়ে অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। নিজের দেশকে বহিঃর্বিশ্বে উপস্থাপন করা, নিজের ঐতিহ্য সম্পর্কে একটি পজিটিভ ধারণা দেওয়া যায়। আমরা শুধু ব্যবসা করছি না, পাশাপাশি নিজের দেশের সুনাম অর্জনে কাজ করছি।