আগামিকাল শনিবার (১৯ নভেম্বর) সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে আজ শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে জেলার সঙ্গে সারা দেশের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সিলেট বিভাগের তিন জেলায় বাস মালিক সমিতির ডাকে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। বিএনপির সিলেট বিভাগীয় মহাসমাবেশের ঠিক আগের দিন এই ধর্মঘট পালন করছেন পরিবহন মালিক সংগঠনগুলো। তবে অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আন্জুমানে হেফাজতে ইসলাম’ এর ইজতেমা চলায় সিলেট জেলা ধর্মঘটের আওতায় নেই। আগামীকাল শনিবার এ জেলার পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন নেতারা।
এদিকে ধর্মঘট চলায় গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) রাত থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেছেন। কোনো কোনো এলাকা থেকে নৌপথে সিলেটে এসে পৌঁছাতে শুরু করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
আরও পড়ুন- ওএমএসের আটার দাম বাড়ল
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছেন পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। ধর্মঘটের কারণে হবিগঞ্জ থেকে শুক্রবার সকালে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। এমনকি অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোতেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শত শত যাত্রী। তবে বৃহস্পতিবার রাতেই এ জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মীরা সিলেটে পৌঁছান। সমাবেশ স্থল আলিয়া মাদরাসার মাঠে দেখা দেখে তাদের অবস্থান নিতে।
হবিগঞ্জ মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায় বলেন, নবীগঞ্জ রোডের সালামতপুর বাসস্ট্যান্ডে তাদের গাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে প্রশাসনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এর প্রতিবাদেই তারা মূলত ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। এছাড়া অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশা বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে তারা ধর্মঘট করছেন। দাবি না মানার আগ পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
এদিকে সুনামগঞ্জেও চলছে বাস মালিক সমিতির ডাকে পরিবহন ধর্মঘট। সকাল থেকে সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে এ জেলায়। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা সুনামগঞ্জ থেকে ট্রলার ও নৌকায় সিলেট আসছেন। শুক্রবার ভোরে অনেকেই সিলেটে এসে পৌঁছেছেন।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার সকালে শহরের বৈঠাখালী এবং সাহেব বাড়ি ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত ও স্টিলবডির নৌকা নিয়ে সিলেটে রওনা করেছেন বিএনপি নেতারা।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন বলেন, সিলেটের সমাবেশ সফল করতে আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছি। ধর্মঘট আর পুলিশের ভয় দেখিয়ে আমাদের সমাবেশে যাওয়া বন্ধ করা যাবে না। যে কোনোভাবেই আমরা সিলেটে গিয়ে পৌঁছাব।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে বাধা দিতেই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজারেও পরিবহন ধর্মঘটে সাধারণ লোকজন পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এ জেলার বিএনপি নেতারাও বৃহস্পতিবার সিলেটে পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে।
সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের জন্য খাবার দাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। নেতা কর্মীদের যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য নগরীর অন্তত ২২টি কমিউনিটি সেন্টার বুকিং রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশে এখন মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই পরিবহন মালিকদের চাপ সৃষ্টি করে ধর্মঘট আহ্বান করানো হয়েছে। তবে এতে সমাবেশে কোনো প্রভাব পড়বে না। ইতোমধ্যে আমাদের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সিলেটে এসে পৌঁছেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও চলে এসেছেন। পুরো শহর সমাবেশস্থলে রূপ নেবে বলে আমরা আশা করছি।
সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, আমরা কারো সমাবেশে বাধা দিতে ধর্মঘট ডাক দেইনি। এটা আমাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবীর পলাশ বলেন, আজ হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। হয়তো এজন্য গাড়ি চলছে না। আর তিন আগে ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়ায় যাত্রী নেই বললেও চলে। যাত্রী না থাকায় অনেকেই গাড়ি বের করেনি।
এদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পুলিশ তৎপর রয়েছে। কোথাও জনস্বার্থ বিঘ্নিত ঘটলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।